
১৪.০৫.২০২০। বৃহস্পতিবার
সকাল ৯.০৫
এবার বাস দুর্ঘটনায় পরিযায়ী শ্রমিকদের মৃত্যু। সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় সড়ক দুর্ঘটনায় ১৬ জনেরও বেশি পরিযায়ী শ্রমিক মারা গিয়েছেন। কোথাও গাড়ির চালক মদ্যপান করে ঈষৎ টালুমালু ছিল। কোথাও আবার রাস্তা খারাপ হওয়ায় স্টিয়ারিংয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখা যায়নি।
মনে হচ্ছিল, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ২০ লক্ষ কোটি টাকা আর এঁদের জীবনে দেখা দিল না! কিন্তু সত্যিই কি এঁদের কথা ভেবে এই প্যাকেজ? কোনও সরকার যখন নীতি তৈরি করে এবং প্রণয়ন করে, তখন কি তাদের মাথায় দেশের এই লোকগুলোর মুখ ভেসে ওঠে? এইসব নিরন্ন, নাচার, অসহায় মুখ? তাদের আশা–আকাঙ্ক্ষা, তাদের সুখ–দুঃখ, তাদের দিনযাপন, তাদের রোজ আর রুজির লড়াই? মনে হয় না। তেমন হলে স্বাধীনতার ৭৩ বছর পর আমাদের দেশের প্রান্তিক মানুষের এই অবস্থা হয় না। স্বাধীনতার পর সাত–সাতটা দশক বেরিয়ে গেলেও নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে নেতাদের পাকা রাস্তা, পানীয় জল বা বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে হয় না। গণতন্ত্র না তামাশা!
কাল রাতে টিভি–তে দুটো দৃশ্য দেখছিলাম। ইমেজ অফ দ্য ডে। সন্তানসম্ভবা স্ত্রী এবং দু’বছরের সন্তানকে একটা চাকা লাগানো পিঁড়িতে বসিয়ে টানতে টানতে হাইওয়ে ধরে চলেছেন এক যুবক। ওইভাবে তিনি পাড়ি দেবেন ৬০০ কিলোমিটার রাস্তা। দীর্ঘদিন ট্রেনের অপেক্ষাতে থেকেও তিনি ট্রেন পাননি। এছাড়া আর তাঁর উপায় কী?
দ্বিতীয়: মা’কে হাতগাড়িতে বসিয়ে কাঁধে জোয়াল জুতে নিয়েছেন ছিপছিপে তরুণ। সেই জোয়ালের অন্যপ্রান্তে একটি শ্বেতশুভ্র বলদ। গাড়ি টানার জন্য দ্বিতীয় বলদ পাওয়া যায়নি। কী করা যাবে! কঠিন সময়। মা’কে নিয়ে পৌঁছতে হবে গন্তব্যে। রাজপথ ধরে একটি মানুষ এবং একটি মনুষ্যেতর প্রাণীর মরিয়া যাত্রা শুরু হয়েছে ৮৫০ কিলোমিটার পেরোনর লক্ষ্যে। ৮–৫–০ কিলোমিটার! ভেবেছেন কখনও কেউ?
এঁদের কথা ভেবে নীতি প্রণয়ন করেন আপনার–আমার নেতারা? মনে হয়? এঁরাই আমার দেশবাসী। সহ–নাগরিক। টিভি ভুল বলছিল। ওগুলো মোটেই ‘ইমেজ অফ দ্য ডে’ নয়। ‘ইমেজ অফ এভরিডে’!
সকাল ১০.১৩
বারান্দায় শুকোতে দেওয়া জামাকাপড় তুলতে গিয়ে দেখলাম একটা কাঁচা আম পড়ে আছে। লোনলি। নিশ্চয়ই পাশের বাড়ির গাছ থেকে এসে পড়েছে। এ কীসের ইঙ্গিত? এ কীসের আমন্ত্রণ?
বেলা ১১.১৭
আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে শ্রমিক স্পেশাল এবং স্পেশাল ট্রেন ছাড়া অন্য কোনও যাত্রীবাহী ট্রেন চলবে না। যাঁদের বুকিং করা আছে, তাঁদের টাকা ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তবে এবার স্পেশাল ট্রেনেও ওয়েটিং লিস্ট টিকিট থাকবে। আরএসি থাকবে না। ফলে রেল পরিষেবা ধাপে ধাপে স্বাভাবিক হওয়ার যে জল্পনা চলছিল, তা অন্তত ৩০ জুন পর্যন্ত হচ্ছে না।
দিল্লি থেকে ছাড়া স্পেশাল ট্রেনটি হাওড়ায় পৌঁছেছে। স্টেশনে ৪০টি বাস রেখেছিল রাজ্য পরিবহণ দফতর। সেগুলিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বসে যাত্রীরা রওনা দিয়েছেন নিজ নিজ গন্তব্যে।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী টুইট করেছেন, বিভিন্ন রাজ্যে আটক বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য ১০৫টি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওই ট্রেনগুলি বিভিন্ন রাজ্য থেকে বাংলার অভিমুখে রওনা দেবে’।
দুপুর ১২.০৫
‘হু’ জানিয়ে দিল, এইচআইভি ভাইরাসের মতোই করোনাভাইরাসও পৃথিবীতে থাকবে। অর্থাৎ, একে পুরোপুরি নির্মূল করা যাবে না। এই কথাটা প্রথম থেকেই মনে হয়েছে। কিন্তু পাশাপাশিই মনে হয়েছে, তফাতও আছে। প্রথমত, বহু গবেষণাতেও এইচআইভি–র প্রতিষেধক পাওয়া যায়নি। করোনার প্রতিরোধক এবং প্রতিষেধক হয়তো দ্রুত আবিষ্কার করা যাবে। কিন্তু কবে? আজ, এইমুহূর্তে যদি করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হয়, তাহলেও তা বাজারে আসতে আসতে আরও ১৮ মাস। অর্থাৎ অন্তত দেড়বছর। দ্বিতীয়ত, এইচআইভি যেভাবে সংক্রমিত হয়, তার চেয়ে অনেক সহজে এবং নিরাপদে করোনা সংক্রমিত হতে পারে। ফলে করোনা আরও বিপজ্জনক।
এই কথাগুলো মাঝেমধ্যেই জনান্তিকে এবং প্রকাশ্যে বলে থাকি। কিন্তু ‘হু অ্যাম আই?’ একমাত্র ‘হু’ বললেই বিষয়টা বৈধতা পায়। এবং সেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এইচআইভি–র মতো করোনাও আমাদের সঙ্গে থাকবে। ফলে করোনার সঙ্গে সহবাসে অভ্যস্ত হওয়াটাই ভাল।
করোনাকে দিনযাপনের সঙ্গী করেই দুটো বিষয় চিকিৎসাবিজ্ঞান চেষ্টা করে যাবে। প্রতিষেধক বা প্রতিরোধক আবিষ্কার। সেগুলো হয়তো কোনও না কোনওদিন বেরোবেও। তারপর পাড়ার ল্যাবে ল্যাবে করোনা পরীক্ষার কিট পাঠাতে হবে। যাতে লোক সহজে এবং বাধ্যতামূলকভাবে পরীক্ষা করাতে পারে। তারপর সেই অনুযায়ী তারা বাইরে বেরোবে বা হোম কোয়ারেন্টিনে থাকবে। যেমন এখন চিকেন পক্স হলে হয়। কিন্তু তাতেও ফ্যাচাং আছে। একবার টেস্ট রিপোর্ট নেগেটিভ হলেও দ্বিতীয়বার পজিটিভ হতে পারে। তখন? নাহ্, আর ভাবতে পারছি না। তখন ভাগ্যের হাতে ভবিষ্যৎ!
দুপুর ১.১১
বাবা–মা’কে খেতে দিতে গিয়েছিলাম নীচে। নামতে নামতে শুনলাম গভীর আলোচনা চলছে। বিষয়: গতকাল রাতে বাবার গ্যারাজের দিকের দরজার তালা খুলে বাইরে বেরোনর প্রয়াস। মা প্রশ্ন করছে বাবাকে, ‘কাল অত রাতে তুমি কোথায় যাচ্ছিলে?’
— কোথায়? আমি জানি না তো!
‘জানো না? কী বলছ? তালার চাবি খুঁজছিলে তো। দরজা খোলার জন্য। মেন সুইচ অফ করে দিয়েছিলে। মনে নেই?’
— না তো! আমার তো কিছুই মনে পড়ছে না। (আমার দিকে তাকিয়ে) কোথায় যাচ্ছিলাম আমি? তুমি কি জানো? কিছু বলতে পারবে?
আমি: হ্যাঁ জানি। কেন বলতে পারব না। তুমি একটু বেড়াতে যাচ্ছিলে। বাড়িতে থাকতে থাকতে বোরড হয়ে গিয়েছো তো।
— তা–ই না? হবে বোধহয়। আমার এখন আর মনে পড়ছে না (একগাল হাসি)।
কিছু চিকেন প্রিপারেশন বাকি ছিল। সেটা মা–কে দিলাম। প্রশ্ন করায় বলল, খুবই ভাল হয়েছে নাকি খেতে। হাসলাম। জানি, যতটা বলছে, অতটা মোটেই নয়। জাস্ট পাতে দেওয়ার মতো হয়েছে। ওটা অপত্যস্নেহ বলছিল।
দুপুর ১.৩৪
কালকের ‘লকডাউন ডায়েরি’তে বাবার কথা পড়ে অনেকে লিখেছেন আমার ফেসবুকের ওয়ালে। লিখেছেন তাঁদের নিকটজনদের ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার কথা। লিখেছেন সেই কাছের মানুষদের নিয়ে তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা। সুদীপ্তা লিখেছেন। ইন্দ্রভান লিখেছেন। শর্মিষ্ঠা লিখেছেন। নীলাঞ্জন লিখেছেন। তানিয়া লিখেছেন। শবনম লিখেছেন। সুমনা লিখেছেন।
সকলেরই মনে পড়েছে তাঁদের বাবা বা জীবনে অন্য নানা বয়স্ক মানুষের কথা। যাঁরা ডিমেনশিয়ায় ভুগেছেন। এঁরা যে আমার পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে রিলেট করতে পেরেছেন, সেটা ভেবেই আর নিজেকে একা লাগছে না। মনে হচ্ছে, ওই তো! কতজন আছেন, যাঁরা জীবনের কোনও না কোনও সময়ে এই সঙ্কটে পড়েছেন। এমনই কঠিন সময় কাটিয়েছেন। আবার উঠেও দাঁড়িয়েছেন।
মনে হচ্ছিল, এই ডায়েরি লিখতে লিখতে কত মুহূর্তকে ছুঁয়ে ফেলছি রোজ। কত জমা নীরবতার সঙ্গে সেতু রচনা হচ্ছে। ভাল লাগছে। সাহসী লাগছে।
দুপুর ২.১৫
মাঝে মাঝে মনে হয়, প্রাচীন ভারতের বর্ণাশ্রম প্রথা, ছোঁয়াছুঁয়ি, বাছবিচারই আবার করোনার হাত ধরে ছদ্মবেশে ফিরে এল। তফাত হল— এই বিচার ধর্ম বা বর্ণ নয়। এই বিচার নির্ভর করে সুস্থতা, সুরক্ষা এবং সংক্রমণের উপর। অর্থাৎ, করোনা থাকলে ছোঁয়া যাবে না। সে ব্রাহ্মণ হোক বা অব্রাহ্মণ। এখন আর শূদ্রের সঙ্গে ব্রাহ্মণের বর্ণভেদ থাকবে না। করোনা–আক্রান্ত ব্রাহ্মণকে ছুঁতে আপত্তি জানাতে পারবে শূদ্রও।
বর্ণাশ্রম গিয়েছে। এসেছে ‘করোনাশ্রম’।
বিকেল ৪.১৫
কিছু ইনফো পেলাম। ঝপাঝপ লিখে রাখি। এগুলো জরুরি।
১. বেসরকারি বাসের ভাড়া তিনগুণ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে বাসমালিকদের সংগঠন। ভাড়ার যে তালিকা তৈরি হয়েছে, তাতে এবার থেকে বাসে উঠলেই ২০ টাকা। মিনিবাসে ৩০ টাকা। সর্বোচ্চ দূরত্ব পর্যন্ত গেলে ৫০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া হতে পারে। অনেকেই দেখছি গজগজ করছেন। এঁরা হচ্ছেন তাঁরা, যাঁরা টোল প্লাজায় টোল ট্যাক্স ফাঁকি দিতে চান। কিন্তু বাসমালিকরাই বা কী করবেন? তাঁরা তো আর ভর্তুকি পান না। ভাড়া বাড়ানো ছাড়া উপায় কী? তবে সর্বোচ্চ ৫০ টাকাটাও একটু বাড়াবাড়ি মনে হচ্ছে। দেখা যাক, রাজ্য সরকার এই প্রস্তাব মেনে নেয় কিনা। নাকি কিছু কাটছাঁট করে একটা মধ্যপন্থা বেরোয়।
২. সরকার যে সমস্ত বাস চালু করেছে, সেখানে ওঠার জন্য দেখছি গাদাগাদি ভিড়।
৩. সোমবার থেকে কলকাতার রাস্তায় হলুদ ট্যাক্সি চালু হতে পারে। সেক্ষেত্রে ভাড়ার অতিরিক্ত ৩০ শতাংশ অর্থ দিতে হবে। অর্থাৎ, ১০০ টাকা মিটারে ভাড়া উঠলে দিতে হবে ১৩০ টাকা।
৪. মধ্য হাওড়ার হরিজন বস্তিতে ৩২ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
৫. চেন্নাইয়ের এক পাইকারি বাজারে ২,৬০০ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
৬. অর্থাভাবে কলকাতা এবং বৃহত্তর কলকাতার অনেক বাড়িতে কেব্ল সংযোগ ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। মাসে চার থেকে পাঁচশো টাকা কেব্লের পিছনে ফালতু খরচ বলে মনে হচ্ছে অনেকের। এটা ব্যাপকহারে শুরু হলে টিভি সিরিয়ালের দর তথা টিআরপি কমতে শুরু করবে। সিরিয়াল ইন্ডাস্ট্রি বড়সড় গোলমালে পড়বে।
৭. অমিতাভ বচ্চন টুইট করেছেন, ‘১৯৬৯ সালে ফিল্মে কাজ শুরু করেছিলাম। এটা ২০২০ সাল। একান্ন বছর। প্রচুর বদল এবং চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে গিয়েছি। এখন আরেকটা চ্যালেঞ্জ। আমার ছবি গুলাবো সিতাবোর রিলিজ ১২ জুন অ্যামাজন প্রাইমে। আরও একটা বদলের অংশ হতে সম্মানিত’। এই ছবির পরিচালক সুজিত সরকার। অমিতাভের সঙ্গে অভিনয় করেছেন আয়ুষ্মান খুরানা। কিন্তু এই ছবি যে সিনেমাহলে রিলিজ করার কথা ছিল। তার জন্য আগাম টাকা বিনিয়োগ করা ডিস্ট্রিবিউটররা এখন কী করবেন? তাঁরা কি টাকা ফেরত পাবেন?
৮. আজ থেকে নবান্ন স্যানিটাইজ করা শুরু হল। আজ এবং আগামিকাল ওই প্রক্রিয়া চলবে। তারপর শনি এবং রবি ছুটি। ফলে নবান্ন আবার খুলবে সোমবার।
৯. একটা ফিচেল পোস্ট দেখলাম। ফেসবুকে রিলেশনশিপ স্টেটাসের জায়গায় সিঙ্গল, ইন আ রিলেশনশিপ, ম্যারেড, ডিভোর্সড, সেপারেটেড–এর সঙ্গেই এবার থেকে নাকি ‘আত্মনির্ভর’ লেখা থাকবে। এই বিপন্ন সময়েও ব্যাপক লাগে মানুষের বিশুদ্ধ রসিকতাবোধ দেখে। এঁদের সত্যিই স্যালুট।
বিকেল ৫.১৩
পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। পাশাপাশিই জানালেন, আগস্ট মাস থেকে এক দেশ এক রেশনকার্ড চালু হচ্ছে। এর ফলে দেশের যে কোনও জায়গায় যে কোনও রেশনকার্ড ব্যবহার করা যাবে। এরও লক্ষ্য মনে হচ্ছে পরিযায়ী শ্রমিকরা। তাঁরা ঠাঁইনাড়া হলে যেখানে যাবেন, সেখানে একই রেশনকার্ড ব্যবহার করতে পারবেন।
পশ্চিমবঙ্গের খাদ্যমন্ত্রী অবশ্য দাবি করছেন, ‘এই প্রকল্প ইমপ্লিমেন্ট করা যাবে না। টিভি–র ঘোষণা টিভি–তেই থেকে যাবে।’
শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল, পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য এই ব্যবস্থা আগে নেওয়া যেত না? তাঁরা তো যুগ যুগ ধরে এভাবেই কাটিয়ে যাচ্ছেন। এখন লকডাউনের জন্য তাঁদের কথা জানতে পারছে গোটা দেশ। এখন তাঁদের উপর প্রচার এবং সহানুভূতির সার্চলাইট পড়েছে। হাইওয়ে ধরে মাইলের পর মাইল হাঁটা, হাঁটতে হাঁটতে ধুঁকতে ধুঁকতে রাস্তায় পড়ে প্রাণ দেওয়া, মালগাড়ির চাকা বা ট্রাকের তলায় পিষ্ট হওয়া— সরকার বাহাদুরের নজরে পড়ার জন্য তাঁদের এতজনকে প্রাণ দিতে হল! অবশ্য, গণতন্ত্রের ভিত তো শহিদ বেদির উপরেই তৈরি হয়।
রাত ৮.৫৮
অমিতাভের ছবি অ্যামাজনে রিলিজ করা নিয়ে আইনক্সের তরফে কড়া বিবৃতি। যাতে স্পষ্ট বলা হচ্ছে, এই চেষ্টা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হলেও এর ফলে পারস্পরিক বিশ্বাসের বাতাবরণ বিষিয়ে যাচ্ছে। বিশেষত, এখন এমন একটা সময়, যখন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করা উচিত। এই প্রবণতা বিপজ্জনক এবং অনভিপ্রেত।
আইনক্স কর্তৃপক্ষ আরও বলেছেন, সিনেমা এবং কনটেন্ট ক্রিয়েটররা বরাবর এক পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং লাভের ভিত্তিতে কাজ করে এসেছে। ভাল বিষয় যাতে প্রচুর মানুষ দেখতে পারেন, সেজন্য সারা দেশে আইনক্স বিশ্বমানের সিনেমা অভিজ্ঞতার ব্যবস্থা করেছে। সমস্ত কনটেন্ট নির্মাতার কাছে আইনক্সের আবেদন, থিয়েটার রিলিজ এড়িয়ে যাবেন না। তাতে সমস্ত স্টেকহোল্ডাররাই ক্ষতিগ্রস্থ হবেন।
এই বিষয়টা কোথায় যায়, তার দিকে আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে থাকব। কারণ, এই আক্রমণাত্মক এবং বিক্ষুব্ধ বিবৃতির অন্যপ্রান্তে দাঁড়িয়ে এক ৬ ফুট ২ ইঞ্চির ফ্রেঞ্চকাট। সেদিক থেকে দেখতে গেলে আইনক্স তো সরাসরি পাঙ্গা নিয়ে নিল বলিউডের শাহেনশাহর সঙ্গেই! বিনোদন জগতে এই যুদ্ধ অভূতপূর্ব তো বটেই।
রাত ৯.১০
রাজ্যপাল আবার চিঠি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীকে। ইস্যু: কলকাতা পুরসভায় প্রশাসক নিয়োগ। কেন তাঁকে সেই নির্দেশিকা সংক্রান্ত তথ্য এখনও পাঠানো হয়নি। এটা ক্রমশ একটা পাকা ফোড়ার মতো হয়ে উঠছে। টনটন করছে। পিন ফোটালেই গলগল করে পুঁজরক্ত বেরিয়ে আসবে। এখন দেখার পিনটা কে এবং কবে ফোটায়।
রাত ৯.২৫
টুইটারে এইমাত্র দেখলাম, আবার ৯ জন পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। যে ট্রাক্টরে চেপে তাঁরা যাচ্ছিলেন, সেটি একটি বিদ্যুৎস্তম্ভের সংস্পর্শে এসে তড়িদাহত হয়। সেখানেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান মোট ৯ জন।
রাত ১০.৪৫
বাড়ি ফেরার আগে অফিসে বসেই আজকের শেষ এন্ট্রিটা লিখছি। এরপর কম্পিউটার শাটডাউন করব। জিনিসপত্র গোছাব। ডায়েরি ব্যাগে ভরব। তারপর টুকটুক করে নীচে নেমে পোর্টিকোয় রাখা গাড়িতে উঠে স্টার্ট দিয়ে ১০ মিনিটে বাড়ি পৌঁছব। গাড়ি পার্ক করে হাত ধুয়ে, হট প্লেট আর মাইক্রোওয়েভে খাবার গরম করে রাতের খাওয়া সেরে বিছানায় গড়িয়ে পড়ব। সহজ। সুন্দর। সরল। এই–ই তো।
আর এই দেশেরই কোনও এক প্রান্তে এই একই আকাশের তলায় চাকা লাগানো পিঁড়ি টেনে টেনে চলা এক যুবক ক্লান্ত হয়ে রাস্তার পাশে ঘুমিয়ে থাকবেন। গর্ভস্থ সন্তানকে নিয়ে তাঁকে আঁকড়ে ধরে থাকবেন তাঁর স্ত্রী। পাশে গুটিসুটি মেরে শুয়ে থাকবে তাঁদের সন্তান। আবার অন্য এক প্রান্তে কাঁধ থেকে জোয়াল খুলে বলদের খাবারের ব্যবস্থা করবেন এক তরুণ। মায়ের রাতের খাবারের জোগাড়টাও তাঁকেই করতে হবে।
এই ঘটনাগুলো সবই যুগপৎ ঘটতে থাকবে। এই দেশে, এই একই আকাশের তলায়।
প্রান্তিক মানুষেরা চিরকালই বাতিলের দলে…. আগেও, এখনও।
তফাৎ শুধু এই যে আমরা নিজেরা আজ বিপন্ন তাই ওদের কথা ভাবছি বা ওদের এই দুর্দশা
চোখে পড়ছে।
কিন্তু ওইটুকুই, করতে তো পারছি না কিছুই।
LikeLike
সেই…
LikeLike