
০৬.০৫.২০২০। বুধবার
ভোর ৪.০৪
প্রবল মেঘ ডাকছে। ঘনঘন বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। ঝাঁকে ঝাঁকে বৃষ্টি এসেছে। বিদ্যুৎ চমকানোর চোটে ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। প্রথমে মনে হল, ঘরের ভিতরটা কেমন আলো আলো হয়ে গেল। অথচ সমস্ত জানালা–দরজা বন্ধ। এটা কী করে হল বুঝতে পারলাম না।
দরজা খুলে বারান্দায় গিয়ে দেখলাম, তোড়ে বৃষ্টি নেমেছে। রেলিংয়ে মেলে দেওয়া সমস্ত জামাকাপড় অসহায়ভাবে ভিজছে। সেগুলো তুললাম। ভেবেছিলাম, একটু বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখি। তারপর মনে হল, এর চেয়ে বাকি বিশ্বের মতোই নিদ্রামগন থাকা ভাল। তাই বিছানায় ঝাঁপ দিয়ে পড়েছি।
সকাল ৮.২০
আজও অ্যালার্ম–ইগনোরেন্ট হয়ে ঘুম ভাঙল। সকাল ৮টায় অ্যালার্ম দেওয়া থাকে। সেটা যথেষ্ট তীক্ষ্ণ। কানে না আসার মতো নয়। এমনিতেই আমার ঘুম যথেষ্ট পাতলা। অ্যালার্ম শুনতে পাই না, এমন সাধারণত হয় না। কিন্তু আজ হল। খুব দেরি হয়ে গিয়েছে। বুড়োবুড়ি নিশ্চয়ই সকালের চায়ের জন্য বসে আছে। কর্তব্যে ঘোর অন্যায় হল।
সকাল ৮.৫৮
লজ্জা লজ্জা মুখ করে বাবা–মা’কে চা দিয়ে এলাম। তাঁরা ক্ষমাশীল। অতএব কিছু বললেন না। এখন দেখছি বৃষ্টিতে চারদিক সকাল সকাল চান–টান করে সেজেগুজে দাঁড়িয়ে আছে। দারুণ লাগছে। ঝলমল করছে চারপাশ। আকাশের রং ঝকঝকে নীল। মেঘমুক্ত। গরমটাও নেই। মৃদুমন্দ বহিতেছে মলয়পবন। বাহ্।
কিন্তু একইসঙ্গে আরও একটা কথা মনে হল। আমরা যারা পাকাবাড়িতে থাকি এবং একটা মাপমতো বারান্দার অধিকারী, ভোরবেলা ঝড়বৃষ্টি হলে তাদের রোমান্স জাগে। চিত্ত উচাটন এবং মন উড়ু উড়ু হয়। কিন্তু সেই একই ঝড়বৃষ্টিতে মাঠের শস্য নষ্ট হয়। গ্রামে গ্রামে কাঁচাবাড়ি ভেঙে পড়ে। ঘরের অ্যাসবেস্টসের চাল উড়ে যায়। মাথার আচ্ছাদন হারিয়ে নিরাশ্রয় মানুষ নাঙ্গা, উদোম এবং বেআব্রু হয়ে পড়ে। তখন শুরু হয় তাদের বেঁচে থাকার নতুন লড়াই। করোনা অর নো–করোনা।
সকাল ১০.০৪
টিভি বলছে, কলকাতা পুরসভার মুখ্য প্রশাসক হচ্ছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তৈরি হচ্ছে ‘বোর্ড অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটরস্’। সেখানে রয়েছেন মেয়র–সহ আটজন। নেতৃত্বে মেয়র। তাঁর সঙ্গে বোর্ডে তাঁরা, যাঁরা গত পাঁচবছর মেয়র পারিষদ ছিলেন। অর্থাৎ, সেই বোর্ডই ক্ষমতায় রইল। সেই মর্মে সরকারি নির্দেশিকা জারি হবে। অর্থাৎ, কলকাতায় পুরভোট হচ্ছে না। প্রশাসক বসছে। ভোট যে নির্দিষ্ট সময়ে হবে না, সেটা আগেই বোঝা গিয়েছিল। যেমন এটাও জানা আছে যে, ভোট কবে হবে তার কোনও ঠিক নেই। তবে কলকাতা পুরভোটই হল সরকারিভাবে সেই প্রথম গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, যার উপর করোনা অভিঘাত পড়ল। এখন এই অভিঘাতটাও করোনার মতোই সংক্রামিত হবে। দেখার যে, আগামী বছর নির্ধারিত বিধানসভা ভোট পর্যন্ত সেটা চলে কিনা। সোজা কথায়, বিধানসভা ভোটও পিছিয়ে যায় কিনা।
অর্ডিন্যান্স না এনে সরাসরি কলকাতা পুরসভায় প্রশাসক নিয়োগ করায় বিরোধীরা হল্লা শুরু করেছে। করবেই। এমনিতে পুরসভার প্রশাসক হিসেবে কোনও আমলাকে নিয়োগ করাই রীতি। এক্ষেত্রে তা হয়নি। সেটাও বিরোধীদের একটা ইস্যু। তবে গণতন্ত্রে সংখ্যাই শেষকথা বলে। এখনও পর্যন্ত।
সকাল ১০.৪০
সেরেছে! অভিজিৎ বিনায়কের টুইটার অ্যাকাউন্টটি তাঁর নয়। ফেক। ভুয়ো। তাঁর নামে কেউ ওটা খুলেছে।
ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ টুইটারে ‘আ মেসেজ ফ্রম দ্য ইকনমিস্ট অভিজিৎ ব্যানার্জি’ বলে নোবেলজয়ীকে কোট করে লিখেছেন, ‘আপনি যদি সোশ্যাল মিডিয়ায় থাকেন তাহলে কি এই সত্যিটা লোককে জানাতে পারেন যে, আমায় টুইটারে ইম্পার্সোনেট করা হচ্ছে। আই অ্যাম নট অন টুইটার’।
দ্বিতীয়ত, সুদীপ্তা মেসেঞ্জারে অর্থনীতিবিদ তথা চিত্র পরিচালক সুমন ঘোষের ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট পাঠিয়েছে। যেখানে সুমন পরিষ্কার বলেছেন, ওই টুইটার অ্যাকাউন্ট অভিজিতের নয়। ওই হ্যান্ডলে অভিজিৎকে নানারকমভাবে ট্রোলও করা হয়েছে। কিন্তু সবই বিফলে গিয়েছে। কারণ, অ্যাকাউন্টটি নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের নয়। ফেসবুক পোস্ট বলছে, সুমন এখন ভাবছেন মিস্ফায়ার করার জন্য ট্রোলদের মাইনে দেওয়া হবে কিনা। ব্যক্তিগতভাবে আমার ধারনা, রাহুল গান্ধীর সঙ্গে কথোপকথনের পর কোনও বিশ্বগেঁড়ে এবং অত্যুৎসাহী কংগ্রেসি এটা করে থাকবে।
লকডাউন ডায়েরি ব্লগ এবং ফেসবুকে রোজ আপলোড করার পর খুবই কৃতজ্ঞ লাগে। দেখে আপ্লুত লাগে, যাঁরা পড়েন, তাঁরা কত মন দিয়ে পড়েন। সামান্যতম ভুল হলেই ধরিয়ে দেন। যেমন এই অভিজিতের ফেক টুইটার অ্যাকাউন্টের ব্যাপারটা। প্লাস কোয়েলের সন্তান। কোনওদিনই বিভিন্ন পারিবারিক সম্পর্ক এবং তাদের প্যাঁচ–পয়জার সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান না–থাকায় গতকাল ভুল করে রঞ্জিত মল্লিক এবং তাঁর স্ত্রী–কে কোয়েলের সদ্যোজাত সন্তানের ‘ঠাকুর্দা–ঠাকুমা’ লিখে ফেলেছিলাম। নিমেষে ঝড় উঠে গেল! অধিকাংশই ডায়েরিকারের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে ব্যক্তিগতভাবে মেসেঞ্জারে লিখে ভুল ধরিয়ে দিলেন যে, মেয়ের বাবা–মা ‘দাদু–দিদা’ হন। তাঁদের সবিনয়ে ধন্যবাদ জানিয়ে বললাম, শুধরে দিয়েছি। একজন তো সরাসরি ওয়ালেই লিখে বসলেন। তাঁকে ওয়ালেই বললাম, ভুল হয়েছিল। সংশোধন করে দিয়েছি।
অনেকে ভাববেন, এঁরা আসলে হিতৈষী নন। ছিদ্রাণ্বেষী। রোজ ছিপ ফেলে বসে থাকেন। বঁড়শিতে ভুল ধরা পড়লেই টান মেরে তুলে এনে ঝুড়িতে ফেলেন। তারপর সেই ঝুড়ি মাথায় বাজারে বেরিয়ে পড়েন।
আমি তা ভাবি না। উল্টে ভাবি, তাঁরা এই লকডাউন ডায়েরির আত্মীয়। নিজের বলে মনে করেন বলেই চান না যে, কোনওরকম ভুল তথ্য এখানে নথিবদ্ধ থাকুক। নইলে কে কোথায় কী ভুল লিখছে, তা নিয়ে এঁদের কী যায়–আসে! এই ডায়েরি এঁদের প্রত্যেকের কাছে ঋণী। কিছু কিছু ঋণ শোধ করা যায় না। শুধু স্বীকার করা যায়। এই ডায়েরিতেই সেই ঋণ সোচ্চারে স্বীকার করা রইল।
বেলা ১১.১২
আজকাল ওয়ার্কআউটের টাইমটা পিছিয়ে দিয়েছি। সাড়ে ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা। তারপর দ্রুত স্নান করে বাবা–মা’কে ১টার মধ্যে খেতে দেওয়া। ফলে মাঝখানের সময়টা ফাঁকা পড়ে থাকছে হাবিজাবি চিন্তা এবং বোধিজ্ঞান উন্মেষের জন্য—
১. যে লোক সবসময় সবকিছু ঠিকঠাক রাখতে চায়, কাউকে চটাতে চায় না, সকলকে ফুল–বেলপাতা দিয়ে তুষ্ট রাখতে চায়, ভাবে আই শ্যাল নট রক দ্য বোট, তারা আসলে লিডার হতে পারে না। তারা শেষে গোলমালে পড়ে। নেতাকে এসপার–ওসপার করার মানসিকতা রাখতে হয়। আ লিডার শুড নট বি স্কেয়ার্ড টু রক আ বোট। তার মধ্যে এই বিশ্বাসটা থাকতে হয় যে, নৌকা উল্টোলে দরকারে নিজে জলে ঝাঁপ দিয়ে সকলকে উদ্ধার করতে পারব।
‘ইন্ডিয়া টুডে’ থেকে নিয়ে আসার সময় প্রথম মিটিংয়ে অভীকবাবু বলেছিলেন, ‘তোমায় যা দায়িত্ব দিচ্ছি, ছ’মাসের মধ্যে ইউ ইউল বি দ্য মোস্ট আনপপুলার বস্ ইন দিস ইনস্টিটিউশন!’ সবিনয়ে আনন্দবাজারের প্রধান সম্পাদককে বলেছিলাম, আই অ্যাম নট বদার্ড অ্যাবাউট মাই পপুলারিটি চার্ট। কারণ, আমি কখনও প্রেস ক্লাবের ভোটে লড়ব না। আই উইল জাস্ট ট্রাই টু বি ফেয়ার টু এভরিওয়ান টু দ্য বেস্ট অফ মাই এবিলিটি। ব্যক্তিগত পছন্দ–অপছন্দ আমার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে না। করবেও না। কিঞ্চিৎ শ্লাঘার সঙ্গে লেখা থাক, এখনও করে না।
২. যে নিজে অপ্রতিরোধ্য, একমাত্র সেই–ই নিজেকে প্রতিরোধ করতে পারে। থামাতে পারে। নিজের অজান্তেই সে নিজেকে ধ্বংস করার অ্যান্টিডোট তৈরি করে। গৌরবার্থে ভাবলে ইচ্ছামৃত্যু। আবার অন্যদিক থেকে ভাবলে ক্ষমতাসীনের মদমত্ততা। যা তাকে গোকুলে ক্রমবর্ধমান প্রতিষেধকের অস্তিত্ব সম্পর্কে অনবহিত রাখে।
৩. সবচেয়ে বড় নির্বুদ্ধিতা হল বিপক্ষকে দুর্বল মনে করা। সে বিপক্ষ করোনাই হোক বা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ।
৪. সারাক্ষণ নেগেটিভিটিকে এড়িয়ে যাওয়াও এক ধরনের নেগেটিভিটি।
বেলা ১১.১৭
কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে থাকা ৬ জন বিএসএফ জওয়ানের দেহে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে। ওদিকে কলকাতা পুলিশেও আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। এটা গভীর চিন্তার বিষয়। নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরাই যদি আক্রান্ত হতে থাকেন, তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করবে কারা? যদি একের পর এক থানা বন্ধ করে দিতে হয় সংক্রমণের আশঙ্কায়, তাহলে তো রাজ্যটা শাসনহীন হয়ে পড়বে!
দুপুর ১২.৪৫
অবশেষে আজ বাবা–মা’কে একটু চিকেন খাওয়াতে পারলাম। কাল রাতেই ভেজে রেখেছিলাম। অফিসে বেরোনর আগে একটু মরিচ, ভিনিগার আর নুন দিয়ে ফ্রিজে ম্যারিনেট করতে দিয়ে গিয়েছিলাম। রাতে ফেরার পর মন দিয়ে ভাজলাম।
প্রথম এক্সপেরিমেন্টের দিন পেঁয়াজটা মাংসের সঙ্গে ভাজায় পুড়ে ঘন্ট পাকিয়ে গিয়েছিল। সেটা থেকে শিক্ষা নিয়ে গুবলেট এড়াতে কাল পেঁয়াজটা আলাদা করে ভেজেছি। তারপর মাংসটা ভাজলাম। অল্প ভাপে সেদ্ধও করলাম। তারপর পেঁয়াজভাজাটা মাংসের সঙ্গে মিশিয়ে সন্তর্পণে সেই তণ্বী, কৃষ্ণাঙ্গী বোতল থেকে একটু সয়া সস ঢেলে দিলাম। নামানোর আগে সামান্য মধু। ওয়াহ্!
রান্নার পর খুন্তি এবং হাতাটা চাটতে চাটতে মনে হয়েছিল, ঠিকই আছে। দিব্য হয়েছে। নুন–টুনও ঠিকঠাক।
তা–ও একটু টেনশনে ছিলাম। কিন্তু আজ বাবা–মা’কে খেতে দেওয়ার সময় ওদের মুখে যে তৃপ্তি দেখলাম, সেটাতেই আমার ভুবনজয় হয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি, মাসমাইনে দাবি করার কেসটা আরও জোরাল হল। হা–হা–হা।
দুপুর ২.৪৫
বিকল্প আয়ের লাইন খুলে গিয়েছে। মদের দোকানে অন্যের বদলে লাইন দিয়ে মানুষ টাকা রোজগার করছে। জনপ্রতি ১০০ টাকা। অন্তত ফেসবুকে অভিজ্ঞের যা পোস্ট দেখলাম। এটাও এখন একটা প্রফেশন। ‘বাবু’রা রোদের মধ্যে লাইনে দাঁড়ানোর পরিশ্রম করছেন না। তার বদলে ১০০ টাকা দিয়ে সেই পরিশ্রমটা বিক্রি করে দিচ্ছেন এলাকার ছুটকো মানুষের কাছে। তাঁদের খাটুনি বাঁচছে। ঘরে বসে মদ পাচ্ছেন। আবার গরিব মানুষেরও দুটো পয়সা আয় হচ্ছে। এই–ই হল মাইক্রো পর্যায়ে বিকল্প অর্থনীতি। আর এই হল মানুষের দম। নিজের জীবিকা নিজেই খুঁজে নিয়ে যে অসমযুদ্ধেও বেঁচে থাকে।
দুপুর ৩.৫০
ওরেব্বাস! কেন্দ্রীয় সরকারও নাকি এবার কো–মর্বিডিটির তত্ত্ব আওড়াতে শুরু করেছে। যে কো–মর্বিডিটি নিয়ে চারদিকে এত আলোচনা, এত রাজনীতির চাপানউতোর। তারপর এই? এ তো দেখা যাচ্ছে, আবার পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পথে হাঁটছে কেন্দ্র। মহামতি গোখলে নিশ্চয়ই মহাখুশি। হোয়াট বেঙ্গল থিঙ্ক্স টুডে ইত্যাদি।
বিকেল ৪.০৫
আজও প্রেসকে ব্রিফ করছে আলাপন’দা। মুখ্যসচিবকে এখনও দেখা যাচ্ছে না। বস্তুত, মুখ্যমন্ত্রী প্রেসকে ব্রিফ করেছিলেন সম্ভবত ২৯ এপ্রিল। তারপর তিনিও আর সাংবাদিক বৈঠক করেননি। মাঝেমধ্যে টুইট করেছেন এবং ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। যেমন আজ টুইট করে জানিয়েছেন, কাল থেকে মেডিক্যাল কলেজ পূর্ণাঙ্গ ‘কোভিড হাসপাতাল’ হিসেবে কাজ শুরু করবে।
নবান্নে আলাপন’দা জানাচ্ছে, রাজ্যে নতুন করে করোনা–আক্রান্ত হয়েছেন ১১২ জন। মোট করোনা–আক্রান্ত ১,৪৫৬ জন। গত ২৪ ঘন্টায় আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে। আর ২৭,৫৭১ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।
ভারত–বাংলাদেশ সীমান্তের পেট্রোপোলে গত কয়েকদিন ধরে একটা হুজ্জুতি চলছিল। কেন্দ্রীয় সরকার তাদের না–জানিয়ে সীমান্ত বাণিজ্য শুরু করে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছিল রাজ্য সরকার। পরদিন থেকেই সেখানে বিক্ষোভ শুরু করেন একদল লোক। তাঁদের বক্তব্য, কাস্টমস অফিসাররা বাইরে থেকে আসায় সংক্রমণের সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। আদান–প্রদান কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। গতকাল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব রাজ্যের মুখ্যসচিবকে চিঠি লিখে বলেন অবিলম্বে গোলমাল মেটাতে। কারণ, দু’দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কের কিছু বাধ্যবাধকতা আছে। বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত বাণিজ্য চালু করাতেই হবে। তাছাড়াও, লকডাউন চললেও কেন্দ্রীয় সরকার পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলের নির্দেশ দিয়েছে। সেই নির্দেশ মানতে হবে।
সেই চিঠিটা নিয়ে আলাপন’দাকে বারবার গ্রিল করার চেষ্টা করল সংবাদমাধ্যম। কিন্তু স্বরাষ্ট্রসচিবের ডিফেন্স অটুট। ব্যাট–প্যাডের মধ্যে আলো গলার ফাঁকও নেই।
এই না হলে শীর্ষস্তরের আমলা!
বিকেল ৫.৩০
অফিসে আমার চা খাওয়ার দুটো মাগ আছে। একটা কুচকুচে কালো। আরেকটা ট্রান্সপারেন্ট। ট্রান্সপারেন্টটা গত দু’দিন ধরে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। মনটা হাল্কা খারাপ ছিল। ওই মাগটায় লিকার চা ঢাললে দেখতে চমৎকার লাগত। কতটা চা বাকি আছে, সেটাও বোঝা যেত। কালও পীতাম্বরকে খুঁজতে বলেছিলাম। পাওয়া যায়নি। কিন্তু আজ একটু আগে শুভেন্দু ম্যাজিকের মতো মাগটা বার করে দিল! রবিবার চা খেতে খেতে ভুলে গিয়ে বারান্দায় ফেলে এসেছিলাম। রাতে শুভেন্দু দেখতে পেয়ে লকারে তুলে রেখেছিল।
ভগবান শুভেন্দুর মঙ্গল করুন। ওর সোনার মাগ হোক।
বিকেল ৫.৫০
কলকাতায় কনটেনমেন্ট জোনের সংখ্যা বেড়েছে। বেড়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও। ১ থেকে একলাফে বেড়ে ২২। উত্তর ২৪ পরগনাতেও জোনের সংখ্যা বেড়েছে। আবার হাওড়া আর নদিয়ায় বাড়েনি। যা বুঝতে পারছি, এই সংখ্যাটা প্রতিদিন ওঠানামা করতে থাকবে। সাপলুডোর স্কোরের মতো। কখনও মইয়ের নীচে। কখনও সাপের মুখে। শুধু রিভার্স অর্ডারে। এখানে সাপের মুখে পড়লে ভাল। কমে যাওয়া। আর মইয়ের তলায় পৌঁছলে একেবারে ধাঁ করে উপরে।
শুধু ভাবছি, বুলা’দি এই রিভার্স লুডোটা বুঝতে পারবে তো?
সন্ধ্যা ৭.০০
দিলীপ ঘোষ, সোশ্যাল মিডিয়া যাঁকে আদর করে ‘দিলুদা’ বলে, একেবারে ফাটিয়ে দিয়েছেন। সাংবাদিক বৈঠকে ক্যামেরার সামনে আসছেন পদ্মফুল প্রতীক আঁকা মাস্ক পরে। এটা কিন্তু এখনও কেউ করতে পারেনি। ভাবা যায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায় জোড়াফুল আঁকা মাস্ক পরে বা সূর্যকান্ত মিশ্র কাস্তে–হাতুড়ি আঁকা মাস্ক পরে সাংবাদিক বৈঠক করছেন? ব্যাকব্রাশ করা সল্ট অ্যান্ড পেপার চুল, চোখে ফিনফিনে চশমা, কালো টি–শার্ট, মুখে সবুজ মাস্কের উপর হলদে রংয়ের পদ্মফুল— হ্যান্ডসাম লাগছিল দিলুদাকে।
আবার একটা রিভার্স লুডো শুরু হল। যেখানে মইয়ে উঠলে বিপদ এবং রাজ্য সরকার মইয়ে উঠে নম্বর বাড়িয়েছে। অন্তত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিবের চিঠি তেমনই বলছে।
কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল রাজ্য ছাড়ার আগে মুখ্যসচিবকে যে চিঠি দিয়ে গিয়েছিল, তাতে বলা হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গে করোনায় মৃত্যুর হার ১২.৮ শতাংশ। গোটা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। তারা ফিরে গিয়ে প্রাথমিক রিপোর্ট দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিবকে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে আজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব আবার রাজ্যের মুখ্যসচিবকে চিঠি দিয়েছেন। যেখানে বলা হয়েছে রাজ্যে মৃত্যুর হার ১৩.২ শতাংশ। অর্থাৎ, প্রতি ১০০ জনে ১৩ জনেরও বেশি মৃত্যু হয়েছে করোনায়।
রাত ১০.৩৭
বুলা’দির জন্য চিন্তা হয়, তিনি তো প্রীতি জিন্টা নয়।