
২৭.০৪.২০২০। সোমবার
সকাল ৮.১৭
শান্তিতে কি দুটো হাঁচিও দেওয়া যাবে না? বাবা-মা এর জলখাবারের পাউরুটিতে মরিচ ছড়াতে গিয়ে নাকে ঢুকে যাওয়ায় পরপর দুটো হাঁচি দিলাম। তারপরেই চমকে উঠে চারদিকটা একটু দেখে নিলাম— কেউ শুনল না তো? ফাঁকা কিচেন। অ্যাকচুয়্যালি বাড়ির দোতলাটাই পুরো ফাঁকা। তবু সন্দেহাকুল হচ্ছি। কী কাণ্ড!
আজ আবার মনে হল, আমাদের জীবনে যে তথাকথিত এসেনশিয়াল জিনিসগুলো এখন পাচ্ছি না, সেগুলো আসলে সব বাড়তি ছিল। আদৌ জরুরি ছিল না। কোনও কারণে নয়। এমনিই ভাবলাম। আজকাল মাঝেমাঝেই এই কথাটা মনে হয়।
সকাল ৯.০০
আজ কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল পূর্ব মেদিনীপুর গিয়েছে। টিভি–তে বলছে, যাওয়ার সময় উলুবেড়িয়া পেরিয়েই রাস্তার ধারে লকডাউন কেমন চলছে দেখতে দেখতে গিয়েছে। এমনকী, বিভিন্ন রাস্তাঘাটের ছবিও তুলেছে। এসবই কাজে লাগবে ৩ মে–র সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে। এই ছবি তোলার ব্যাপারটায় কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বিলক্ষণ চটবেন। এমনিতেই উনি কেন্দ্রীয় দল নিয়ে একটু কুপিত আছেন। তারপর আবার এরা যেভাবে বিভিন্ন জায়গায় ঢুকে পড়ছে কমলবনে মত্ত হস্তীর মতো, তাতে ওঁর রেগে যাওয়াটা স্বাভাবিক।
সকাল ১০.০০
মন্দিরা বেদিকে প্রণাম জানিয়ে আজ থেকে ওয়ার্ক আউট শুরু করে দিলাম। আমি গুরুবাদে বিশ্বাসী। জন্মাবধি দেখেছি, কিছু করতে গেলে আমায় কোনও না কোনও গুরুর কাছে নাড়া বাঁধতে হয়। চারদিক দেখেশুনে মনে হল, এই ব্যাপারে মন্দিরাই বেস্ট!
অতএব, ‘জয় গুরু’ বলে শুরু করে দিলাম। বেডরুমের মেঝেতে যোগা ম্যাট পেতে সকাল সওয়া ৯টা থেকে এই ১০টা। মোট ৪৫ মিনিট। তবে ননস্টপ নয়। মাঝে কয়েকবার ওয়াটার ব্রেক নিতে হয়েছে। নেওয়া উচিত আধঘন্টায় একবার। আশা করি, নিয়মিত করলে এই ব্যাপারটা ঠিক হয়ে যাবে। কালকের দিনটা ভাইটাল। গা–হাতের ব্যথায় সাধারণত সেকেন্ড দিন আর করতে ইচ্ছে করে না। সেই অনিচ্ছেটাকে হারিয়ে নেমে পড়লেই চিন্তা থাকবে না। তারপর তো হ্যাবিটই হয়ে যাবে।
আজ দেখলাম, দীর্ঘদিনের অনভ্যাস তৈরি হয়ে গিয়েছে। প্রায় দু’মাস ব্যাডমিন্টন খেলা হয়নি। কোনও ধরনের কোনও এক্সারসাইজ নেই। গোটা প্রক্রিয়াটার শেষে মাত্র ১ মিনিট প্ল্যাঙ্ক করতে গিয়েই ফেটে গেল! গোটা শরীর থরথর করে কাঁপছে। কানের পাশ দিয়ে তিরতির করে ঘাম গড়িয়ে পড়ছে। অথচ আগে অন্তত ৫ মিনিট টানা করতে পারতাম। কষ্ট হল ঠিকই। তবে অনেকদিন পর সেই পরিশ্রমের ঘাম টপ টপ করে গড়িয়ে পড়ার ব্যাপক ফিলিংটা এল।
স্ট্রেচিং শেষ করে সিলিং ফ্যানের হাওয়ায় ঘাম জুড়োতে জুড়োতে মনে হল, ‘হাওয়া দেয় শনশন তারারা কাঁপে, শরীরে কি জং ধরে পুরনো খাপে।’
ম্যাটটা আর মেঝে থেকে তুলিনি। পাতাই আছে। কারণ, ওটা দেখে কাল মোটিভেশন তৈরি করতে হবে।
বেলা ১১.১০
ওয়ার্ক আউট করে স্নান সেরে বেরোলে রাক্ষসের মতো খিদে পায়। তাই টোস্ট আর ডিমসেদ্ধর উপর ঝাঁপিয়ে পড়লাম। আজ বাবা–মায়ের লাঞ্চের মেনু ঈষৎ বদল করার বাসনাও আছে। দেখা যাক সেই ভেঞ্চারটা সফল হয় কিনা।
দুপুর ১২.১৫
প্রবল বৃষ্টি আসছে মনে হচ্ছে। এই মধ্যদুপুরেও চারদিক অন্ধকার করে এসেছে। গাড়িটা কাল ভোলা ধুয়েছিল। আজ প্রকৃতি ধুয়ে দেবে। ব্যলান্স, ব্যালান্স। জীবনের ভারসাম্যের জয় হোক।
দুপুর ১২.৫২
এক্সপেরিমেন্ট সফল। ডাল–ভাতের সঙ্গে মাছভাজা করেছি। এটা অবশ্য আগে থেকেই করতে জানতাম। শুধু ইন্ডাকশন কুকারে বলে একটু চাপ হচ্ছিল। ডুবতেলে করা গেল না। কিন্তু তা সত্ত্বেও মনে হচ্ছে, তেলটা একটু বেশিই দিয়ে ফেলেছি। ভাজার পর টিস্যুপেপারে মুড়ে রাখা উচিত ছিল। তাহলে তেলটা টেনে নিত। এরপর থেকে সেটা করতে হবে। তবে মা খেয়ে বলল, ভালই লেগেছে। ভাবছি, আমিও ২ পিস খেয়ে নিই। ডিপ ফ্রাই তো কী? আজ থেকে তো ওয়ার্ক আউট শুরু করে দিয়েছি!
এখন আবার বৃষ্টির মধ্যে ছাদে উঠে আম কুড়োতে হবে সনৎ আর মন্টুর জন্য। উফ্ফ, কী কঠোর পরিশ্রম। মন্টু আবার মনুষ্যরূপী বকরাক্ষস। ওর সবকিছু খাওয়া দিয়েই নিরূপিত হয়। মানে ‘আমায় যে খাওয়াবে আমি তার সঙ্গে আছি’ টাইপ্স। কিন্তু আমি যেদিনই অফিসে কুড়িয়ে–বাড়িয়ে আম নিয়ে যাই, বেচারার সেদিন ডিউটি থাকে না। কিছুতেই ব্যাটে–বলে হচ্ছে না। মনে ওর খুব দুঃখ। আজ ওকে খুশি করতে হবে।
দুপুর ১.৩৩
টিভি–তে বলছে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে লকডাউন তোলা বা না তোলা নিয়ে আজ কোনও আলোচনা করা হয়নি। তবে বলা হয়েছে, লকডাউন করে দেশের ভাল হয়েছে। অন্য দেশের তুলনায় ভারতের অবস্থা এখনও ভাল আছে। আগামী বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠক। সেদিনই নাকি লকডাউন নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কারণ, লকডাউন যত বেশি চলবে, তত বেহাল হবে দেশের অর্থনীতি। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এসে যোগ দিয়েছিলেন অমিত শাহ এবং রাজনাথ সিংহও।
৭৮ দিন টানা লকডাউনের পর চিনের ইউহান করোনামুক্ত হয়েছে। এই ইউহান থেকেই করোনার সংক্রমণ শুরু হয়েছিল। স্পেন, ইতালি, আমেরিকায় নাকি গত ২৪ ঘন্টায় মৃতের সংখ্যা কমেছে। এটা কি কোনও সু–সঙ্কেত?
বেলা ৩.০৫
অফিসে পৌঁছে একটা ঝাঁঝালো গন্ধ পেলাম। যা থেকে বুঝতে পারছি, পুরো অফিস স্যানিটাইজ করা হয়েছে। শুনলাম, স্যানিটাইজ করা হয়েছে অফিসের সমস্ত গাড়িও। বিপ্লব আশ্বস্ত।
হাওড়ার বাসিন্দা বিপ্লব এখন বেজায় আতঙ্কে। নিজে কেমিক্যাল দিয়ে বাড়িতেই স্যানিটাইজার বানিয়েছে। ছোট একটা শিশিতে নিয়ে ঘোরে সবসময়। যেহেতু নিজেই বানায়, তাই ফুরোনর কোনও চান্স নেই। কোনও কিপটেমি না করে প্রায় স্নান করার মতো স্যানিটাইজার মাখে। মাঝে মাঝে মনে হয়, এত কেমিক্যাল হাতে ঘষতে ঘষতে ওর হাতের রেখা–টেখাগুলো সামান্য যা আছে, সেগুলো সব মুছে না যায়! অশোক’দার মিটিংয়েও শিশিটা নিয়ে ঢোকে। ভালই করে। তবে এর মধ্যে একবার বিপদে পড়েছিল। অফিস থেকে বাড়ি ফেরার সময় গাড়িতে পকেটে রাখা শিশির ছিপি খুলে গিয়ে পুরো স্যানিটাইজার ট্রাউজার্স ইত্যাদিতে মাখামাখি হয়ে গিয়েছিল। বলল, ‘কী জ্বালা! কী জ্বালা! কামু’দাকে বললাম, শিগগির গাড়ি থামাও। এখনই সব সাফ করতে হবে।’ বেচারা।
বিকেল ৪.৩০
জি বাংলায় অনলাইন শো শুরু করছে সুদীপ্তা। ফেসবুকে লম্বা পোস্ট করে জানিয়েছে। একদম বাস্তবসম্মত এবং ফিউচারিস্টিক সিদ্ধান্ত। প্রতিভাময়ী অভিনেত্রী। ও সফল হবে। হবেই।
বিকেল ৫.০৭
টুইটারে দেখলাম, গায়িকা কণিকা কাপুরকে ডেকে পাঠিয়েছে পুলিশ। বলেছে, থানায় গিয়ে জবানবন্দি দিতে হবে। গতকালই ইনস্টাগ্রামে বিশাল স্টেটমেন্ট দিয়েছিল বেচারি। আজ লখনউ পুলিশ গিয়ে বাড়িতে নোটিস লটকে দিয়ে এসেছে। কোভিড সেরে গিয়ে দিব্যি ছিলি বাবা–মায়ের সঙ্গে। কী দরকার ছিল সোশ্যাল মিডিয়ায় চ্যাটাং চ্যাটাং বিবৃতি দেওয়ার! এখন লাও ঠেলা। পুলিশের কাছে গিয়ে জবানবন্দি রেকর্ড করো!
বিকেল ৫.৩২
পশ্চিমবঙ্গে সম্ভবত ২১ মে পর্যন্ত লকডাউন থাকবে। তেমনই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীর সাংবাদিক বৈঠক থেকে। কারণ, মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, ভিডিও কনফারেন্সে লকডাউন বাড়ানোরই ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর বডি ল্যাঙ্গোয়েজ দেখে তেমনই মনে হয়েছে। সাধারণভাবে মনে হচ্ছে, রেড জোনগুলোয় লকডাউন বাড়বেই। পশ্চিমবঙ্গের বিষয়টা মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিয়ে পরশু অর্থাৎ, বুধবার জানানো হবে।
মুখ্যমন্ত্রী আজ টুইট করে জানিয়েছেন, বিভিন্ন রাজ্যে আটকে পড়া বাংলার বাসিন্দার নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তিনি যতদিন আছেন, ততদিন যেন কেউ অসহায় বোধ না করেন। একইসঙ্গে বলেছেন, রাজস্থানের কোটায় যে ছাত্ররা আটকে আছেন, তাঁদের ফেরানোর প্রক্রিয়া আজ থেকেই শুরু হবে।
যদিও প্রধানমন্ত্রীর অভিমত, আপাতত যে যেখানে আছেন সেখানেই থাকুন।
এ রাজ্যের জন্য আজ ‘ক্যাবিনেট কমিটি অন কোভিড ম্যানেজমেন্ট’ গড়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। চেয়ারম্যান অমিত মিত্র। কমিটিতে থাকবেন পার্থ চ্যাটার্জি, চন্দ্রিমা ঘোষ আর ফিরহাদ হাকিম। আর আমলাদের মধ্যে মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব এবং স্বাস্থ্যসচিব। এখন থেকে এঁরাই করোনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় দেখবেন। কারণ, মুখ্যমন্ত্রী যেমন বললেন, তাঁর আরও অন্য কাজ আছে।
পাশাপাশিই জানিয়ে দিলেন, করোনা পজেটিভ হলেও সরকারি বিধি মেনে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা যাবে। টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে তাঁদের চিকিৎসা হতে পারে। কারণ, মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘লক্ষ লক্ষ লোককে তো আর কোয়ারেন্টিন করা যায় না!’
বিভিন্ন দিক থেকে এই ঘোষণাটি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ধারনা, ‘এপিক’। ইতিহাস এবং ভাবীকাল এই ঘোষণার দিকে ফিরে ফিরে বারবার তাকাবে।
সন্ধ্যা ৭.৪৫
অর্ণব গোস্বামীকে সকাল থেকে জেরা শুরু করেছিল মুম্বই পুলিশ। এখনও জেরা শেষ হয়নি। সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ অর্ণব গিয়েছিল থানায়। মুখে বট্ল গ্রিন রঙের মাস্ক, হাতে সার্জিক্যাল গ্লাভস, ডেনিম ট্রাউজার্স আর কালো ফুলস্লিভ শার্ট পরিহিত অর্ণব একবার কয়েক মিনিটের জন্য বেরিয়েছিল। তখন একবার মিনারেল ওয়াটারের বোতল থেকে জল খেতেও দেখা গেল। কিন্তু অপেক্ষমান সহকর্মীদের সঙ্গে তার সেভাবে কথা হয়নি। ভিতরে ফিরে যাওয়ার আগে অর্ণব দেখলাম ডানহাতের তর্জনী আর তার পাশের আঙুল তুলে ‘ভি’ চিহ্ন দেখিয়ে গেল। আবার জেরা শুরু হয়েছে। সকাল থেকে সাড়ে ১০ ঘন্টা কেটে গিয়েছে এন এস জোশী মার্গ পুলিশ স্টেশনে।
ইতিমধ্যে যারা অর্ণবের উপর হামলা করেছিল বলে অভিযোগ, তারা ১৫ হাজার টাকার ব্যক্তিগত জামিনে মুক্তি পেয়েছে। এই খেলাটা কিন্তু অনেকদূর যাবে।
রাত ৮.২৮
ছোটবেলার বন্ধু রাজা সার্ফ এক্সেলের একটা অডিও–ভিস্যুয়্যাল হোয়াট্সঅ্যাপে পাঠাল। এত অসামান্য বানিয়েছে যে কী বলব! বিজ্ঞাপন। কিন্তু জীবনের কথা বলে। এটা বলেছে এই মাস্ক–ময় জীবন এবং রমজান নিয়ে। এমনই ভাল একটা বিজ্ঞাপন একবার দেখেছিলাম স্যামসাংয়ের। সেখানে একটি অন্ধ মেয়ে ছিল। আর এখানে একটি দেবশিশুর মতো দেখতে বালক। দেখতে দেখতে চোখে জল এসে গেল। বোধহয় সত্যিই বয়স হচ্ছে এবার। বেশি ইমোশনাল হয়ে যাচ্ছি।
অন আ ডিফারেন্ট নোট, বিজ্ঞাপনের জগৎ যে কত বদলে গিয়েছে ভাবা যায় না। যতবার দেখি, চমৎকৃত হই! বদলে গিয়েছে ভাষা। বদলে গিয়েছে কনসেপ্ট। প্রায় প্রতিটা বিজ্ঞাপনই একেকটা শর্ট ফিল্ম। মনে আছে, এককালে বিজ্ঞাপনের জগতে কাজ করার শখ ছিল। তারপর মনে হল, ওই জগৎটার সঙ্গে বোধহয় মানিয়ে নিতে পারব না। আমি প্রকৃতিগতভাবে অতটা ক্রিয়েটিভও নই। অতটা পাগলাটেও নই। আর আমি মনে করি, তুঙ্গ ক্রিয়েটিভ হতে গেলে একটা অন্তর্লীন পাগলামি এবং উন্মার্গগামিতা প্রয়োজন হয়। শৃঙ্খলাবদ্ধ জিনিয়াস কি হয়? নাকি জিনিয়াসকে শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা যায়?
রাত ৯.৩১
অর্ণবের জেরা এখনও চলছে। যাতে ক্ষুব্ধ হয়ে বাবুল সুপ্রিয় টুইট করেছেন, ১১ ঘন্টার উপর একজন সাংবাদিককে জেরা করার অর্থ, যে প্রশ্ন তিনি করেছিলেন, সেই তির লক্ষ্যভেদ করেছিল। ইন ফ্যাক্ট, অর্ণবের থানায় পৌঁছনোর পর ১২ ঘন্টা হয়ে গিয়েছে। ইন্টারেস্টিং। আরও ইন্টারেস্টিং হল যে, এতক্ষণ ধরে জেরা করায় অর্ণব আজ রাতে ওর শো–টাই করতে পারল না। এরপর কি রোজ রোজ ওকে ডেকে এভাবেই বেশি রাত পর্যন্ত জেরা করবে পুলিশ? যাতে ও পরপর কয়েকদিন ও বিখ্যাত চিৎকৃত প্রাইমটাইম শো–টাই না করতে পারে?
রাত ৯.৪০
অবশেষে অর্ণব ছাড়া পেল থানা থেকে। রিপাবলিক সেটা লাইভ দেখাচ্ছে। আর ধারাভাষ্যে যা বলছে, তাতে মনে হচ্ছে, স্বয়ং ক্ষুদিরাম বসু বেরোলেন দীর্ঘ পুলিশি জেরার পর। এখন অর্ণব থানার সামনে ওর চ্যানেলকেই বাইট দিচ্ছে। বলছে, ‘সনিয়া সম্পর্কে যা বলেছি, ঠিক বলেছি। আমি কিছু তথ্যপ্রমাণও দিয়েছি পুলিশকে। কিন্তু আমি আমার শো মিস করতে চাই না। আমি এখন বাড়ি যাব। স্নান করে ফ্রেশ হয়ে স্টুডিওতে গিয়ে শো করব। আরও বেশি এনার্জি নিয়ে করব।
বোঝো কান্ড! এ কিন্তু পুরো জিনিস একটি। শেখার আছে। যা বোঝা যাচ্ছে, স্টুডিওয় গিয়ে অর্ণব গত ১২ ঘন্টার বিবরণ দেবে নিজস্ব টিকা–টিপ্পনি সহ। আর যাবতীয় টিআরপি খেয়ে যাবে গভীর রাত পর্যন্ত।
রাত ১০.৩৩
আজ ফেসবুকে সত্রাজিৎ একটা অসাধারণ ভিডিও শেয়ার করেছে। সম্ভবত কোনও একটা বাজারে ঢোকার মুখে সকলকে এক এক করে হাতে স্যানিটাইজার দেওয়া হচ্ছে। একজন সেটা নিয়ে স্রেফ চরণামৃতের মতো নমস্কার করে ভক্তিভরে খেয়ে ফেললেন। আশপাশের সকলে সকলে যখন হাঁ–হাঁ, করেন কী–করেন কী বলে উঠেছেন, তখন আবার তিনি সেটাকে ক্রিম ভেবে গালে–মুখে ভাল করে মেখে নিলেন।
হায়রে ভারতবর্ষ! হায়রে একুশ শতক!