
২০.০৪.২০২০। সোমবার
সকাল ৮.১৬
জীবনটা বোধহয় এক অনন্ত লকডাউনে চলেছে। রোজ সকালে যন্ত্রের মতো উঠি। চা বানাই। কাগজ পড়ি না এবং সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে শুয়ে থাকি। শুয়ে থাকতে থাকতে আলফাল ভাবি। কখনও কখনও ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ি। আবার উঠি। আবার ভাবি। আবার ঘুমোই।
‘মিস্টার নটবরলাল’ সিনেমায় বাঘে খাওয়ার পরও নটবর লালকে বেঁচে থাকতে দেখে, অবাক বালকের প্রশ্নের উত্তরে অমিতাভের বলা ডায়ালগটা মনে পড়ে— ‘ আরে, ইয়ে জিনা বি কোই জিনা হ্যায় লাল্লু?’
সকাল ৮.৩০
বেঙ্গালুরুতে একটা পুলিশ থানায় ব্যাপক ভাঙচুর হয়েছে। আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল ক্ষিপ্ত জনতা। বেশকিছু লোককে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কায় কোয়ারেন্টিনে নিয়ে যেতে গিয়েছিল পুলিশ। তাতেই ওই ‘জনরোষ’। ৫৪ জনকে অ্যারেস্ট করেছে পুলিশ।
কর্ণাটকের পাশের রাজ্য তেলেঙ্গানায় লকডাউন ৩ মে থেকে বাড়িয়ে ৭ মে পর্যন্ত করা হল। তেলেঙ্গানাই প্রথম রাজ্য, যারা এই পর্যায়ে লকডাউন আরও বাড়িয়ে দিল। তারা আরও জানিয়েছে, পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ফুড ডেলিভারি অ্যাপও আজ থেকে চালু হবে না। অতএব তেলেঙ্গানাবাসী, খুঁটে খাও।
সকাল ৮.৫৫
মহারাষ্ট্রের পালগড়ের ঘটনাটা কাল রাতে আর ডায়েরিতে লিখিনি। গা ঘিনঘিন করছিল। কিন্তু আজ না লিখে পারছি না। কারণ, সকাল থেকে দেখছি ফেসবুকে দু’জন সাধু–সহ তিনজনকে পিটিয়ে মারার ভিভিড দৃশ্য। আখলাখ হোন বা কোনও সাধু— এই দেশ, এই দেশের মানুষ তাঁদের এইভাবে পিটিয়ে মারবে? তাঁরা রক্তাপ্লুত দেহে হাতজোড় করে প্রাণভিক্ষা করবেন আর তাঁদের পিছনে পিছনে বাঁশ, লাঠি হাতে জনতা দৌড়ে গিয়ে স্রেফ লেপ–তোশক পেটানোর মতো করে পেটাতে থাকবে? পেটাতেই থাকবে যতক্ষণ না তাঁদের দেহ থেকে প্রাণটা বেরিয়ে যায়? যাঁদের মধ্যে একজন ৭০ বছরের বৃদ্ধ! আর কেউ না কেউ তার ভিডিও ফটোগ্রাফি করবে?
আর আমরা তারপরেও জনগণ ঐক্যবিধায়কের বন্দনা করে গাইব, ‘পূরব–পশ্চিম আসে তব সিংহাসন পাশে, প্রেমহার হয় গাঁথা’। ডিসগাস্টিং!
সকাল ১০.০৬
আজ থেকে লকডাউনে আংশিক ছাড় দেওয়া শুরু হয়েছে। সল্টলেকের সেক্টর ফাইভ নাকি আংশিক খুলবে আজ। নির্দিষ্ট গাইডলাইন মেনে কাজ শুরু হবে সরকারি অফিসেও। ঢোকার মুখে থার্মাল স্ক্রিনিং বাধ্যতামূলক। রাইটার্স, নবান্নে সরকারি কর্মচারীরা আসতে শুরু করেছেন বলে টিভিতে দেখাচ্ছে। নির্দিষ্ট সংখ্যক কর্মীর হাজিরা থাকছে। তবে জুটমিলগুলো খোলেনি বলেই খবর। চা বাগানের খবরটা অবশ্য এখনও জানি না।
সকাল ১০.১৯
আগামী ২৩ তারিখ, বৃহস্পতিবার রাত ৭টা ৫০ মিনিটে ‘হু’–র ডিরেক্টর জেনারেলের সঙ্গে দীপিকা পাড়ুকোনের ইনস্টাগ্রাম লাইভ আছে। বিষয়: ‘প্রায়োরেটাইজিং মেন্টাল হেল্থ ডিউরিং দ্য প্যানডেমিক অ্যান্ড বিয়ন্ড’। কোভিড ১৯ অতিমারীর সময় এবং তারপর মানসিক স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার।
দীপিকার না হয় একটা ডিপ্রেশনে ভোগার ইতিহাস ছিল। কিন্তু এই হুলোবেড়ালের মতো দেখতে ‘হু’ কর্তার কি মনোবিদ থাকার কোনও রেকর্ড আছে? জানি না। নাকি এটা শুধু ‘হু’–র সঙ্গে ভারতের ‘হুজ হু’–র আলোচনা?
বেলা ১১.৩০
আজ একটা অভিযান আছে। যেটা নিয়ে কাল থেকে মনটা উচাটন হয়ে আছে। খানিকটা ভয়ে ভয়েও আছি। কিন্তু উপায় নেই। বেরিয়ে পড়ি। কী হল, সেটা লেখার মতো অবস্থায় থাকলে পরে লিখব।
দুপুর ২.৫৩
সবে অফিসে পৌঁছলাম।
গিয়েছিলাম আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজে। গলার যে ব্যথাটা ভোগাচ্ছিল, সেটা আসলে হচ্ছিল দাঁত থেকেই। যেটা কাল বিকেল নাগাদ ভয়াবহ আকার নিয়েছিল। কথা বলতে কষ্ট। ঢোক গিলতে কষ্ট। চোয়াল নাড়াতে কষ্ট। হিমানীশকে ফোন করলাম। ও বলল, ‘অ্যাবসেস হয়ে গিয়েছে। ওটা বডিতে রাখা মানে কিন্তু লাইফ থ্রেটনিং হয়ে যেতে পারে। প্রসিডিওর করতেই হবে। ইন্টারভেনশন মাস্ট। কোনও দরকার হলে কিন্তু আমায় বলিস।’
যখন ভাবছি কী করি–কী করি, তখনই দেবদূতের মতো উদয় হলেন অফিসের সিনিয়র সহকর্মী শুভা’দা। জানা গেল, ডেন্টাল কলেজে শুভা’দার বিস্তর জানাশোনা। তৎক্ষণাৎ অ্যাপয়েন্টমেন্ট হল। আজ বেলা সাড়ে ১২টায়। দেবদূত নিজেই বললেন আমার সঙ্গে যাবেন। ঠিক হল, হাইল্যান্ড পার্কের সামনে থেকে শুভা’দাকে তুলে ডেন্টাল কলেজে যাব। সেইমতো ডায়েরি বন্ধ করে বাবা–মা’কে অন্যদিনের চেয়ে একটু দ্রুত খেতে দিয়ে রওনা দিয়েছিলাম। বাইপাস দিয়ে সটান হাইল্যান্ড পার্ক। যাওয়ার সময় আজ রাস্তায় একটু বেশিই গাড়ি নজরে এল। কিছু কিছু অফিস খুলেছে বলেই কি? হাইল্যান্ড পার্ক থেকে বাইপাস এবং পর্যায়ক্রমে মা উড়ালপুল ধরে পার্কসার্কাস।
পার্কসার্কাসের মোড়ে গাড়ি গাড়ি পুলিশ। ধূ–ধূ করছে চারদিক। কয়েকটা রোডেশিয়ান ঘুরছে আরসালানের কাছে উচ্ছ্বিষ্টের খোঁজে। এক ঝলকে দেখে লবঙ্গর কথা মনে পড়ল। কতদিন ওকে দেখি না!
পার্কসার্কাস থেকে আনন্দ পালিত রোড এবং মৌলালির মোড় হয়ে ডেন্টাল কলেজ। বহুদিন পর এই রাস্তাটা দিয়ে গেলাম। একটা সময় খুব আসতাম প্রদেশ কংগ্রেসের অফিস বিধান ভবনে। তখন তো চারদিকে হাজারো কিচিরমিচির। এখন গোটা এলাকাটা নিঝুম। জনপ্রাণী নেই। ফুটপাথের উপরের গাছগুলোর মাথা সব ঝাঁকড়া হয়ে গিয়েছে। প্রায় রাস্তার উপর এসে নুয়ে পড়ছে। এমনকী, রামলীলা ময়দানটাকেও সুন্দর দেখাচ্ছে!
ডেন্টাল কলেজে দেখা হল দ্বিতীয় দেবদূতের সঙ্গে। রাজু বিশ্বাস। ডেন্টাল সার্জেন। বসতে বসতেই শুনলাম, এক জজকে সমুদ্রনীল রংয়ের একটা ফোনে দাঁত সংক্রান্ত বিশদ পরামর্শ এবং প্রেসক্রিপশন দিচ্ছেন। জজসাহেবের পর আমার পালা। মুখে মাস্ক এবং হাতে দস্তানা পরে রাজু পরীক্ষা শুরু করলেন। এবং খানিকটা দেখেই স্বগতোক্তি করলেন, ‘ফেসবুকে আপনার ছবি দেখে তো বোঝা যায় না যে মুখের ভিতর এতকিছু বাধিয়ে রেখেছেন!’
সমস্ত সম্পর্কেরই একটা ‘ইট মোমেন্ট’ থাকে। রাজুর সঙ্গে পরবর্তী ঘন্টাদুয়েকে যে কথাবার্তা হল, তার গোড়াপত্তনটা ওই স্বগতোক্তিতেই হয়ে গিয়েছিল। যা আজকের মতো শেষ হল এই কথায় যে, ‘২৫ বছর দাঁত ব্রাশ করেনি, এমন পেশেন্টও দেখেছি দাদা। মুখের মধ্যে একটা পাথর নিয়ে এসেছিল। সব ঠিক করে দিয়েছি। তোমাকেও ঠিক করে দেব। চিন্তা কোর না।’ ঠিকই। এখন দৈনিক পেশেন্ট অনেক কম। কিন্তু জুনিয়রদের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়ার পরেও আমার মতো ইমার্জেন্সি পেশেন্টদের দেখার জন্য সরকারি এই হাসপাতালে রোজ রাজুদের মতো দেড়’শ চিকিৎসক, অধ্যাপক আসছেন। তাঁদের আনা–নেওয়ার বন্দোবস্ত করেছে স্বাস্থ্যভবন। কারণ, শহরে দাঁতের নির্ভরযোগ্য চিকিৎসার এটিই একমাত্র সরকারি হাসপাতাল।
আপাতত ঠিক হয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে আমার রিপিট ভিজিট। সেদিন কিছু একটা হেস্তনেস্ত হবে। তার আগে ঈষদুষ্ণ জলে নুন দিয়ে দিনে যতবার সম্ভব গার্গল করা এবং অ্যান্টিবায়োটিক চালিয়ে যাওয়া। হাসপাতাল থেকে বেরোনর পর পাশের দোকান থেকে ওষুধ কিনলাম। শুভা’দা বৈঠকখানা বাজার থেকে নুন কিনে দিলেন। কিন্তু কিছুতেই দাম নিতে চাইলেন না। বরং বললেন, বৃহস্পতিবারেও আমার সঙ্গে হাসপাতালে আসবেন। ঋণ বেড়ে গেল।
দুপুর ৩.৪৪
আজ এডিট মিটিংয়ে দেখলাম অবশেষে অশোক’দাও মাস্ক পরেছেন। প্রশ্ন করায় বললেন, ‘সুকুমার মুখার্জি বারবার বললেন পরতে। তবে খুব অসুবিধে হয় দেখছি!’
দুপুর ৩.৫১
ভারতে প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে বিজয় মালিয়া ইংল্যান্ডের কোর্টে যে আবেদন করেছিল, তাতে ও হেরেছে। এবার ওকে ভারতে ফিরিয়ে আনতে পারবে কেন্দ্রীয় সরকার।
তবে এই লকডাউনের বাজারে কি আর আনবে? আর যতদিনে লকডাউন উঠে আইন–আদালত আবার নিজের মহিমায় ফিরবে, ততদিনে মালিয়া নিশ্চয়ই আরও কোনও একটা ফিকির ফেঁদে বিলেতেই আবার থেকে যাওয়ার কল করবে।
বিকেল ৫.২৩
আগেই টুইট করে ক্ষোভ জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এখন রাজ্যের মুখ্যসচিবও বলে দিলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার যে টিম পাঠাচ্ছে, তা আগে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়া উচিত ছিল। এটা আমরা মেনে নিতে পারছি না।’ দেশের বিভিন্ন জেলায় কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছে বিজেপি সরকার। তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গেরই ৭টি জেলা। তাতেই ক্ষুন্ন মুখ্যমন্ত্রী। দুপুরেই টুইট করেছেন, ‘কোভিড ১৯ অতিমারী নিয়ে আমরা সমস্ত গঠনমূলক পরামর্শকে স্বাগত জানাচ্ছি। কিন্তু কীসের উপর ভিত্তি করে এই দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেটা স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। এটা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী।’
ঠিকই। স্বাস্থ্য তো আইনশৃঙ্খলার মতোই স্টেট সাবজেক্ট। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের ছয় সদস্যের দল পাঠানো নিয়ে আজ বেলা ১টা নাগাদ অমিত শাহ বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করেছিলেন বটে। কিন্তু দল তো রাজ্যে পৌঁছে গিয়েছে সকাল ১০টায়! তা–ও আবার একটি কার্গো এয়ারক্রাফ্টে। মালবাহী বিমানে। ফলে অমিত শাহের ফোনটা হল হাল্কা ‘অশ্বত্থামা ইতি গজ’ স্টাইল। তবে এটা সহজে থামবে না। প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বড় গুবলু অবশ্যম্ভাবী।
সন্ধ্যা ৬.৩৬
কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল তো দেখছি নবান্নেই পৌঁছে গেল! টিভি–তে দেখাচ্ছে, নবান্নের মেন গেটে তাদের থার্মাল স্ক্রিনিং–টিনিং হচ্ছে। তারা এবার মুখ্যসচিবের সঙ্গে কথা বলবে। কে জানে কী হবে! তারা কি আবার কাল সকাল থেকে রাজ্যে দাপাদাপি শুরু করবে? নাকি রাজ্য তাদের ফিরে যেতে বলবে। রাজ্যের লজিস্টিক সহায়তা ছাড়া তো এদের ঘুরে বেড়ানোও সম্ভব নয়।
রাত ৮.৪৭
গোয়ায় গত দু’সপ্তাহে একজনও করোনা পজেটিভ ধরা পড়েনি। প্রসঙ্গত, গোয়াতেই সবচেয়ে আগে লকডাউন জারি করা হয়েছিল। তাহলে দেখা যাচ্ছে, ‘পজ বাটন’ হিসেবে লকডাউন কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে। এটা ঠিকই যে, মানুষের ব্যাপক অসুবিধে হচ্ছে। দিনমজুরদের জীবন দুর্বিসহ। গোটা দেশ জুড়ে এই আওয়াজ উঠে গিয়েছে যে, করোনায় না মরলেও এবার অনাহারে মরবে মানুষ। হয়তো তাই। কিন্তু লকডাউনটা বোধহয় শিথিল করা উচিত নয়।
প্রাণ গেলে কি আর পেট ভরানোর প্রয়োজন থাকে? মুণ্ডু গেলে খাবটা কী?
রাত ৯.০৭
চোয়াল আর গলার ব্যথাটা অনেকটা কমেছে। এর মধ্যেই অফিসে বারদুয়েক নুন–জলে গার্গল করে ফেলেছি। টাচ উড, কাজ দিচ্ছে। ঢোক গিলতে পারছি। অফিস থেকে বেরোনর আগে আরও একবার করব। বাড়ি ফিরে আরও অন্তত একবার।
অনির্বাণ বলছিল, ‘নুনজলে গার্গল বা কুলকুচি ছাড়াও দাঁতের ব্যথায় পেয়ারাপাতার রস খুব উপকার দেয়। আমার যতবার ব্যথা হয়েছে, ততবার ওটা ব্যবহার করে ফল পেয়েছি। আসলে আমাদের আবার সেই পুরোন দিনের টোটকায় ফিরে যেতে হবে। যেমন নিয়মিত হাতমুখ ধোওয়া বা মুখে যখন–তখন হাত না দেওয়া। এগুলো সব ছোটবেলায় পড়েছি শুধু। নম্বর পাওয়ার জন্য। শিখিনি। এখন শিখছি। যাঁরা পড়িয়েছিলেন, তাঁরাও নম্বর দেওয়ার জন্য পড়িয়েছিলেন। এখন তাঁরাও শিখছেন।’
রাত ৯.৩১
দীর্ঘদিন খবরের কাগজে কাজ করতে করতে মানুষ সিনিক হয়ে যায়। আমি তার ব্যতিক্রম হতে যাব কোন আনন্দে? তবু মানিয়ে–গুছিয়ে নিতে হয়। নিইও। কিন্তু এখনকার এই করোনা–সময়ে একশ্রেণির মানুষের পাবলিসিটি মঙ্গারিং দেখে বমি পাচ্ছে! পিছনে ব্যানার টাঙিয়ে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে দাঁত বার করে পোজ দিয়ে দরিদ্র, নিরন্ন, নাচার মানুষের হাতে এক কিলো চাল বা ডাল তুলে দেওয়ার মধ্যে যে কোনও বীরত্ব নেই, সেটা এই লোকগুলোকে কে বোঝাবে! উল্টে তাঁরা হোয়াট্সঅ্যাপ করে ছবিসহ খবর ছাপানোর আর্জি জানাচ্ছেন। বেহায়ার একশেষ।
যে নিরুপায় মানুষগুলো হাত পেতে ওই দানের তণ্ডুল গ্রহণ করছেন, শুধু তাঁদের কথা ভেবে কষ্ট হয়। খুব কষ্ট হয়। অনেককেই দেখি, মাথায় ঘোমটা দিয়ে বা মুখ ঢেকে আসেন। মনে হয়, হাত পাতার দায় আর আব্রুটুকু রক্ষা করতে চান। নিরুপায় না হলে কে আর দয়ার দান হাত পেতে নিতে চায়। তাঁদের সম্মানরক্ষার দায়িত্বটাও তো থাকে। কিন্তু পাবলিসিটিবাজদের সেকথা কে বোঝাবে!
রাত ৯.৫৪
প্রবল ঝড় উঠেছে। সঙ্গে মুষলধারে বৃষ্টি। পেজ রিলিজ করার পর অফিসের বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখছিলাম। সামনে অনেকটা খোলা আকাশ। সেই আকাশ চিরে চিরে যাচ্ছে বিদ্যুতের রেখা। বৃষ্টিটাকে ধেয়ে আসতে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। দেখছিলাম রাস্তার সোডিয়াম ভেপার ল্যাম্পগুলোর সামনে তীব্র আলোয় বৃষ্টির ঝরোখা সরে সরে যাচ্ছে। দেখতে দেখতে আপনমনেই বললাম, বাহ্, কী দারুণ দেখাচ্ছে!
ফুটকয়েক দূরত্বে দাঁড়ানো সহকর্মী বললেন, ‘যে কোনও প্রলয়ই দেখতে ভাল লাগে। নিজে নিরাপদ দূরত্বে থাকলে!’