
১৩.০৪.২০২০
সকাল ৮.৫২
আজ আর অকালে ঘুম ভাঙেনি। উল্টে সলিড ঘুমিয়েছি। এতটাই, যে সাড়ে ৭টা থেকে অ্যালার্ম স্নুজ করতে করতে ৮টার কিছু পরে উঠলাম। তারপর প্রাত্যহিক কাজ।
কিচেনে গিয়ে দেখলাম, ডিম নেই। চালও খানিক বাড়ন্ত। এগুলো অবিলম্বে কিনতে হবে। বিশেষত ডিম। কোলেস্টেরলের জন্য আমার নিউট্রিশনিস্ট ডিমের কুসুম খেতে বারণ করেছে। কিন্তু কুসুম ছাড়া কি আর ওটা ডিম থাকে! আর আমি কি সইফ আলি খান, যে সকালে ২৫টা ডিমের সাদা দিয়ে ব্রেকফাস্ট করব? এমনিতেও আমি ডিম খেতে খুবই ভালবাসি। কারণ সিম্পল— ডিমে কাঁটা নেই। খাওয়ার পর থালা ধুতে একস্ট্রা এফর্ট লাগে না। চেটে নিলেই সাফ হয়ে যায়। এনিওয়ে, কাল রাতে কিছু জামাকাপড় ভিজিয়েছিলাম। সেগুলো কাচতে হবে। কাল রাতে আলুও সেদ্ধ করে রেখেছিলাম। আজ খোসা ছাড়িয়ে সেটা মাখতে হবে। যতবার আলু মাখি তেল আর নুন দিয়ে, ফুচকার কথা মনে পড়ে আর মনটা হু–হু করে।
রোজ সকাল থেকে এই কাজগুলো করতে করতে পৃথিবীর তাবৎ গৃহবধূর প্রতি শ্রদ্ধা বাড়ছে। যাঁরা সারাজীবন মুখে ‘রা’ না কেড়ে এই কাজগুলো করে যান। করেই যান। আপনারা সকলে আমার প্রণাম নিন। বয়সে বড় হোন বা ছোট।
সকাল ৯.২৬
আজকাল মাঝেমধ্যেই মনে হয়, জীবনে কত অর্থ অপচয় করেছি। উড়িয়ে দিয়েছি। পাগলের মতো শপিং করেছি। গুচ্ছের অপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনে ওয়াড্রোব ভরিয়েছি। স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় আবার যেগুলো জামির লেনের ভারত সেবাশ্রমের অফিসে দিয়ে এসেছি গাড়ি বোঝাই করে।
১৯৯০ সালে আনন্দবাজারে ট্রেনি জার্নালিস্ট হিসেবে জয়েন করার সময় স্টাইপেন্ড ছিল মাসে ১,৬৭৫ টাকা। তখন দু’টি টিউশনি করে হাতখরচ যোগাড় করা আমার কাছে সে অনেক টাকা। তার উপর এক সপ্তাহ পর কর্তৃপক্ষ সেটা, কেন কে জানে, হাজার টাকা বাড়িয়ে করে দিলেন মাসে ২,৬৭৫। আমায় আর পায় কে! মাসের ১০ তারিখে ক্যাশে বেতন পেতাম। তার আগের কয়েকটা দিন উন্মাদের মতো নিউমার্কেটে ঘুরে ঘুরে জামাকাপড় পছন্দ করে রাখতাম। টাকা পেয়েই সটান দোকানে।
তারপরে গত ৩০ বছরে দায়িত্ব বেড়েছে, বেতনও। কিন্তু আমার আদেখলাপনা যায়নি। রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজদের কৃচ্ছসাধন দেখেও কিস্যু শিখিনি। সারদানন্দ ভবনে তুষার’দাকে দেখতাম, একটা তক্তাপোশের উপর পাতলা শতরঞ্চি পেতে শুয়ে আছেন। তোশক–বালিশের বালাই নেই। ভাবতাম, কী করে পারে লোকটা! এখনও ভাবি।
কিন্তু ওই শুধু ভেবেইছি। শিখিনি। অজস্র ফালতু জিনিস কিনেছি। জীবনের ৫০টা বছর ভোগী হয়েই কেটে গেল। এখন তাই জীবন ঘেঁটি ধরে কৃচ্ছসাধন শেখাচ্ছে। দেখছি, সব বাড়াবাড়ি। অপ্রয়োজনীয়।
সকাল ৯.৩০
ফেসবুকে দেখলাম, সত্রাজিৎ পিয়ানোয় ‘ও যে মানে না মানা’ বাজাচ্ছে। ভারী মিঠে লাগছে। ওকে বলেছি, লকডাউন শেষ হলে একদিন সামনে বসে শুনব। পিয়ানোয় গানটা শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল, প্রতিটি গানের সঙ্গে প্রতিটি মানুষের আলাদা আলাদা অ্যাসোসিয়েশন থাকে। প্রতিটি গানের আলাদা এবং মৌলিক ব্র্যান্ড রি–কল থাকে। গানটা কানে এলে সেটা ভিতর থেকে ছলকে ছলকে ওঠে। যেমন এই গানটা শুনে আমার হচ্ছে।
সকাল ৯.৩৮
টিভি বলছে, রাজ্যে এখনও পর্যন্ত ৭ জন চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত। এই তথ্য কি আমাদের কিছু বলছে? বুঝহ যে জন, জান হে সন্ধান।
সকাল ৯.৪৪
সকাল থেকে এত ঘনঘন এন্ট্রি মানেই হাতে কোনও কাজ নেই। ঠিকই। এবং এই অবসরে কিছু অদ্ভুত প্রশ্ন আসছে মনে—
১. যে ছানাপোনাগুলো টিভি–তে বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থার হয়ে অপটু মডেলিং করে, তাদের কি পারিশ্রমিক দেওয়া হয়? মানে ওই যে যারা টিভি–তে ঢোক গিলতে গিলতে বলে, ‘আমি অমুক চন্দ্র তমুক। আমি এবার মাধ্যমিকে ফার্স্ট হয়েছি’ ইত্যাদি। ওরা কি টাকা পায়? পেলেও কত পায়?
২. দীর্ঘদিন এক জায়গায় দাঁড় করিয়ে রাখলে গাড়ির মতো এরোপ্লেনও কি জাঙ্ক হয়ে যায়? গাড়ি যেমন গৃহপালিত কুকুরের মতো। রোজ চরাতে নিয়ে যেতে হয়। নইলে গোলমাল। প্লেনও কি তাই? এই যে লকডাউনের সময় হাজার হাজার এয়ারক্রাফ্ট পৃথিবীর বিভিন্ন এয়ারপোর্টে বা হ্যাঙারে দাঁড়িয়ে আছে (সম্ভবত আরও বহুদিন থাকবে), সেগুলো কি জাঙ্ক হয়ে যাবে? পড়ে পড়ে নষ্ট হয়ে যাবে? প্লেন চরানোর জন্য তো প্রচুর জায়গা লাগবে। তাহলে?
৩. প্রখ্যাত গোলকিপার শিলটন পালের বাবা কি তার জন্মের সময়েই জানতেন যে, ছেলে বড় হয়ে গোলকিপারই হবে? নইলে কী করে অত ছোটবেলায় ইংল্যান্ডের বিখ্যাত গোলকিপার পিটার শিলটনের নামে পুত্রের নাম রাখলেন? যদি বাঙালি শিলটন গোলকিপার না হয়ে কারখানার শ্রমিক বা সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হতো? অথবা গোলকিপার হলেও এত খ্যাতনামা না হতো? তাহলে কি ওর নামটা ওর উপর বোঝা হয়ে দাঁড়াত না?
৪. বিরাট কোহলির চশমার পাওয়ার কত? অফ দ্য ফিল্ড ওকে প্রায় সবসময় চশমা পরতে দেখা যায়। অথচ কেউ সেই কথাটা লেখে না। লেখেনি। লিখলেও আমার চোখে পড়েনি। যেমন সৌরভ যে চশমা পরে, সেটা কেউ কখনও লেখেনি। ইংল্যান্ডে ডেবিউ সিরিজ খেলে ফিরে আসার পর যখন খোলা জিপে চড়িয়ে ওকে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে, তখনই প্রথম দেখেছিলাম সৌরভের চোখে পাতলা ফ্রেমের চশমা। কৌতূহল হয়েছে। কিন্তু কাউকে সেটা নিয়ে তখন বা তার অব্যবহিত পরেও কিছু লিখতে দেখিনি। বিরাটেরও কি চোখ খারাপ? মাঠে কি ও কনট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার করে? নাকি চশমাটা ওর ফ্যাশন স্টেটমেন্ট?
৫. সব সেলিব্রিটিই কি লকডাউনে বাড়িতে কোনও না কোনও সময়ে নাচছে, গাইছে, ওয়ার্ক আউট করছে বা টিকটক ভিডিও করছে? এদের বাড়ির কাজের লোকেরা কি নিয়মিত আসছে? এদের ভিডিওগুলো কারা তোলে (কারণ, অনেক ভিডিওতেই দেখছি, ক্যামেরা নড়াচড়া করছে। অর্থাৎ, সেল্ফ অপারেটেড নয়)? কাজের লোকেরা? নাকি বাড়ির অন্য বাসিন্দারা? তাদের কি এজন্য বিশেষ ট্রেনিং দেওয়া হয়?
৬. বাবা–মেয়ে, মা–মেয়ে, বাবা–ছেলে, স্বামী–স্ত্রী ফেসবুক বা টুইটারে কথা বলে কেন? বাড়িতে নিজেদের মধ্যে তাদের কথাবার্তা হয় না?
৭. সাধারণ লোকে রাস্তায় চুনগোলা দিয়ে এত নিখুঁত বৃত্ত কী করে আঁকছে? যারা আঁকছে, তারা কি স্কুলে ভূগোলে হায়েস্ট মার্কস পেত?
৮. কারও প্রশংসা করার সময় অনেককাল আগে ‘তোমার মুখে ফুল–চন্দন পড়ুক’ এবং অনতি অতীতে ‘তোমার মুখে চপ–কাটলেট পড়ুক’ বলা হতো। এবার কি তার সঙ্গে ‘তোমার মুখে মাস্ক হোক’ চালু হবে?
আপাতত এগুলো নিয়েই চিন্তা করছি।
সকাল ১০.৫৫
ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচারটা চেঞ্জ করলাম। এটা মাস্ক পরা মুখের ছবি। মনে হচ্ছে, বাকি জীবনটা এই প্রোফাইল পিকচারই দিয়ে রাখতে হবে।
বেলা ১১.১৩
বালিগঞ্জ ফাঁড়ির মুক্তি ওয়ার্ল্ড মলের উপরতলায় আগুন লেগেছে। দেখেই মনে হল, নীচের ‘তানিশ্ক’ শো–রুমটা যেন ঠিকঠাক থাকে। তিনবছর ধরে সাহস সঞ্চয় করে কান ফুটিয়ে ওখান থেকে জীবনের প্রথম ডায়মন্ড স্টাডটা কিনেছিলাম। বেঁচে থাকলে আরও কয়েকটা কেনার ইচ্ছে আছে (অপচয় জনিত লোকশিক্ষেটা আর আমার হল না এ জীবনে)।
বেলা ১১.৩২
নরেন্দ্রপুরের ব্যাচমেট নীলাঞ্জনকে ফোন করলাম। এখনও চোখে লেগে আছে ওর স্মুদ বোলিং রান–আপ। মাইকেল হোল্ডিংয়ের পর এত মসৃণ রান–আপ এই লেভেলে আর দেখিনি। নীলাঞ্জন এখন রেলের বড় অফিসার। বিলাসপুরে পোস্টেড। পারচেজে কাজ করে। কিন্তু ঘুষ খায় না। আজব প্রাণী! সততার জন্য দু’বার অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছে। আপাতত বিলাসপুরের রেল হাসপাতালের দায়িত্বে ওকে জুতে দিয়েছে রেলমন্ত্রক। বলল, ‘বেঙ্গলে রেলের কলিগরা বলছিল, ওখানে নাকি এখন দু–ধরনের মৃত্যু হচ্ছে। ডায়েড ফ্রম করোনা আর ডায়েড উইথ করোনা। মানে, একটা করোনার কারণে মৃত্যু আর আরেকটা করোনাকে সঙ্গে নিয়ে মৃত্যু। সত্যি রে?’
বুঝলাম, এই ডেলিভারি দেখতে নিরীহ হলেও সুইং আছে। পা বাড়িয়ে ডিফেন্সিভ খেলাই ভাল। এখন সঙ্কটের সময়। এসব শোনা পাপ। তাই এই আলোচনায় যোগ দিলাম না। ওকে টেনে নিয়ে গেলাম পারিবারিক খোঁজখবর–সহ বিভিন্ন নিরাপদ বিষয়ে।
দুপুর ১২.৪৯
রান্নার পর কিচেন গোছানোর সময় জলের বোতলের হারিয়ে যাওয়া ছিপিটা খুঁজে পেয়েছি। ইয়ো হো!
দুপুর ১.২৫
চেতলায় এলাম। বাচ্চাগুলোর জন্য মন কেমন করছিল। আসার পথে ভবানী ভবনের উল্টোদিকে পেট্রল পাম্প থেকে গাড়ির চাকায় হাওয়া ভরালাম। রেগুলার তেল নেওয়ার সুবাদে পাম্পের কর্মীদের সঙ্গে একটা মিঠে চেনাশোনা আছে। কুশলাদি বিনিময় হয়। ওরা বলল, আমাকে এতদিন না দেখে ভেবেছে নির্ঘাত করোনা হয়েছে! নাহ্, সেটা ভাবেনি। এটা বাজে কথা বললাম। ওরা ভেবেছিল, আমি বোধহয় অন্য কোথাও গিয়েছি। ঠিকই ভেবেছিল। আমি তো এখন সল্টলেকে থাকি।
ওয়াড্রোব খুঁজতে গিয়ে দুটো মিষ্টি আকাশি নীল রঙের মাস্ক পেলাম। শ্বাসকষ্টের জন্য কোনও একটা সময়ে কিনেছিলাম। এখনও মনে আছে, ১৫ টাকা করে নিয়েছিল। তারপর যথারীতি নিজেরই মনে ছিল না। অপচয়। অপচয়। তবু কাজে লেগে গেল।
লবঙ্গ আজ ছাড়তে চাইছিল না। পিছনের দু–পায়ে বিছানার উপর দাঁড়িয়ে সামনের দু–পা দিয়ে কাঁধটা জড়িয়েই রইল। অনেক কষ্টে ছাড়াতে হল। বঙ্কু, মুসুর, গোল্ডি লক্স আর বাকি বাচ্চারাও চলে আসার সময় হাঁ করে তাকিয়ে ছিল। এইজন্যই আই হেট গুডবাইজ!
৩০টা ডিম কিনেছি। ডিম রাখার ক্রেট–সহ। ঠোঙায় রাখলে ভেঙে যেতে পারত। তাই রিস্ক নিলাম না। ডিমের সঙ্গে দোকানদার একটা মাল্টিগ্রেন ব্রেডও গছিয়ে দিলেন। চাল পেলাম না। আরেকদিন ট্রাই নিতে হবে।
দুপুর ২.০৫
হোয়াট্সঅ্যাপে পিনাকী সৌকালীন একটা তথ্য পাঠিয়েছে। ওকে ওর এক বন্ধু জানিয়েছে, গত ২৪ ঘন্টায় ইন্দোনেশিয়ায় চারটে আগ্নেয়গিরি জীবন্ত হয়ে লাভা উদ্গীরণ শুরু করেছে। ক্রাকাতোয়া, সেমারু, মন্টে মেরাপি এবং তাম্বোরা। সঙ্গে যে ভিডিও পাঠিয়েছে, পুরো সিনেমা! এ খবর কি ঠিক না ভুল? জানি না। আমি জাস্ট ডায়েরিতে নথিভুক্ত করে রাখলাম। দু’টি ডিসক্লেমার–সহ। প্রথম, দূত সবসময়েই অবধ্য। এবং দুই, মালের দায়িত্ব কোম্পানির নহে।
দুপুর ২.৩০
অফিসে ঢুকে ছ’টা উল্লেখযোগ্য খবর পেলাম—
এক, কাল সকাল ১০টা জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। বিষয় গেস করার জন্য কোনও পুরস্কার নেই— লকডাউনের মেয়াদবৃদ্ধি। তৎসহ কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছাড় ইত্যাদি।
দুই, কাল নববর্ষে অনির্বাণ মজুমদার নতুন মাস্ক পরবে। অভিজাত এন–৯৫।
তিন, পুলিশ রাস্তায় ‘প্রেস’ স্টিকার সাঁটা গাড়ি দেখলে থামিয়ে জিজ্ঞাসা করছে, আরোহীরা রিপোর্টিংয়ে কাজ করেন? না নিউজ ডেস্কে? অর্থাৎ, গাড়ি নিয়ে বাইরে ঘুরে ঘুরে খবর সংগ্রহ করতে হয়? নাকি অফিসে বসে কাজ করতে হয়? ৩০ বছরের কেরিয়ারে পুলিশের এই প্রজ্ঞা আগে কখনও দেখিনি। আয়াম ইম্প্রেসড। মাইটিলি ইম্প্রেসড!
চার, গুজরাতে ড্রোনে করে পানমশলা আর গুটখা সাপ্লাই করতে গিয়ে দু–জন পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। কেয়া বাত!
পাঁচ, ভারতের করোনা মোকাবিলায় ৫ কোটি টাকা দিয়েছেন গুগলের সিইও সুন্দর পিচাই। সুন্দরের জয় সর্বত্র।
ছয়, হাওড়া ব্রিজে দুই ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় ৪৭ লাখ টাকা উদ্ধার করেছে পুলিশ। দু–জন ডেলিভারি বয় বলে নিজেদের পরিচয় দিয়েছিল। পুলিশের সন্দেহ হওয়ায় কড়কানি পড়ে এবং তারপর যা হইল জানে শ্যামলাল।
দুপুর ৩.৩৭
সরকারি নির্দেশে আজ থেকে পশ্চিমবঙ্গে নাক–মুখ ঢেকে রাস্তায় বেরোন বাধ্যতামূলক। মাস্ক না হলেও কাপড়ে মুখ ঢাকতেই হবে। নইলে পুলিশ বাড়ি ফেরত পাঠিয়ে দেবে। আমেদাবাদে তো মাস্ক না পরলে ৫,০০০ টাকা জরিমানা দিতে হচ্ছে। বেশ হচ্ছে। গণতন্ত্রকে অ্যাবিউজ করাটা আমাদের মজ্জাগত হয়ে গিয়েছে। এবার রাষ্ট্রযন্ত্রের কঠোর হওয়ার সময় এসেছে।
বিকেল ৫.৫৫
ভারতে এখনও পর্যন্ত আক্রান্ত ৯,১৫২ জন। গত ২৪ ঘন্টায় মৃত্যু হয়েছে ৩৫ জনের। সুস্থ হয়েছেন ১৪১ জন। সিঙ্গাপুরে আবার নতুন করে করোনা সংক্রমণ শুরু হয়েছে। অসুস্থ প্রায় ২০০। চিনে ১০৮ জনের। সারা পৃথিবীতে মৃত্যু ১ লক্ষ ১৩ হাজার।
অফিসের বারান্দায় আড্ডা দিতে দিতে অর্ঘ্য বলছিল, ‘এবার ভয় করছে।’ ওকে বললাম, আমার আর ভয় করছে না। যা হওয়ার হবে। এই আতঙ্ক নিয়ে থাকা অর্থহীন। দেখলাম, শ্রাবণ আর উত্তমও একমত। ওদের বললাম, আমার যা ইমিউনিটি আছে, তাতে করোনা হলে মরব না। হলে হবে। দেখা যাবে! আমার শুধু চিন্তা কোন হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে, সেটা নিয়ে।
রাত ৮.০৫
শামিমা একটা চমৎকার টেক্সট পাঠিয়েছে— বাংলার ইতিহাসে এবারই প্রথম ‘একলা বৈশাখ’ পালিত হবে।
রাত ৮.৩১
প্রদ্যোৎ ফোন করল। নরেন্দ্রপুরে আমার এক ব্যাচ জুনিয়র। কিন্তু মিশনের রীতি মেনে ব্যাটা আমাকে ‘দাদা’ বলে না। নাম ধরে ডাকে। নরেন্দ্রপুরের প্রাক্তনীদের মধ্যে ওর সঙ্গেই আমার যোগাযোগ সবচেয়ে বেশি। এর আগে একদিন ফোন করেছিল। দাঁতের ব্যথায় ধরতে পারিনি। আজ কথা হল।
লকডাউন শুরুর পর ওর কথা সবচেয়ে আগে মনে পড়েছিল। তার একটা গূঢ় কারণ আছে। প্রদ্যোৎ আমাকে প্রথম টম হ্যাঙ্কসের ‘কাস্ট অ্যাওয়ে’ ছবিটার কথা বলেছিল। জাহাজডুবির পর একটি মানুষ এক জনমানবহীন দ্বীপে গিয়ে পৌঁছয় এবং একা একা বেঁচে থাকার চেষ্টা করে। কিছুদিন পর থেকে তার সঙ্গী হয় একটি বাস্কেটবল। তার গায়ে চোখমুখ এঁকে সে বলটাকে মানুষ বানিয়ে তাকে সঙ্গী ভাবার চেষ্টা করে।
এখন আমরা সকলে ‘কাস্ট অ্যাওয়ে’র সেই টম হ্যাঙ্কস। নিয়ত একা একা বাঁচার চেষ্টা করছি। কেউ বাস্কেটবলে চোখমুখ আঁকছি। কারও কাছে সেটাও নেই।
আজ কথাটা প্রদ্যোৎকে বললাম। ও তখন আবার হ্যাঙ্কসেরই ‘টার্মিনাল’ ছবিটার কথা বলল। যেখানে এক ভিনদেশি নাগরিক কূটনীতি–বিভ্রাটে আমেরিকার এয়ারপোর্টে আটকে পড়ে। বাইরে যেতে পারে না। সেখানেই তার জীবন ও জীবিকা নির্বাহের লড়াই শুরু হয়। ঠিকই। ‘টার্মিনাল’ও এক ধরনের বন্দিজীবনের ছবি। কিন্তু সেখানে চারপাশটা সচল ছিল। সেখানে মাঝসমুদ্রে চলচ্ছক্তিহীন জনহীন দ্বীপের একাকিত্ব ছিল না।
ফোন ছাড়ার আগে প্রদ্যোৎ বলল, ‘চালিয়ে যা। দারুণ হচ্ছে!’
রাত ৯.১৩
অফিসের জুনিয়র কলিগ দেবাশিস জিজ্ঞাসা করছিল, ‘তোমার সব স্বপ্ন এত ভিভিডলি মনে থাকে? ডায়েরিতে যেমন লিখেছো?’ বললাম, থাকে। স্বপ্ন–দুঃস্বপ্ন, সম্মান–অপমান সব মনে থাকে। আমি কিচ্ছু ভুলি না। আমার হাতির মেমরি।
কী ভালো! আমি আজ প্রথম পড়লাম! এবং আজ থেকেই এই ডাইরির পাঠক হয়ে গেলাম🙂
LikeLike
Two corrections needed. Death in India till today in corona is not 9152. And shopping mall in Ballygunge is not mufty.
LikeLike